সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেড় শ’ বছরেও সিটি করপোরেশন হয়নি সর্ববৃহৎ বগুড়া পৌরসভা 

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

দেড় শ’ বছরেও সিটি করপোরেশন হয়নি সর্ববৃহৎ বগুড়া পৌরসভা 
ছবি : ঢাকা মেইল

পৌরসভা গঠনের প্রায় দেড় শ’ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের ১১টি পৌরসভা বিভিন্ন সরকারের আমলে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু আজও দেশের সর্ববৃহৎ বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন করা হয়নি। আয়তন, জনসংখ্যা, নিজস্ব রাজস্ব আয়সহ সব যোগ্যতা থাকার পরেও সিটি করপোরেশন না হওয়ায় সরকারের সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে যেকোনো সময় বগুড়াবাসীর কাঙ্ক্ষিত এই দাবি পূরণ হতে পারে বলে মনে করেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান।

জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২১ সালে বগুড়াকে জেলা ঘোষণার পর জেলা শহর উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য ১৮৬৯ সালে বগুড়া টাউন কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ডব্লিউ ওয়াভেল। এ কমিটি সাত বছর চলার পর ১৮৭৬ সালের ১ জুলাই বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা, সূত্রাপুর ও আশপাশের এলাকা নিয়ে বগুড়া মিউনিসিপালিটি গঠিত হয়। তখন বগুড়া পৌরসভার আয়তন ছিল ১ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার এবং প্রথম প্রশাসক ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জো হোয়াইটম্যান। দীর্ঘদিন পর ১৯৮১ সালের ১ আগস্ট বগুড়া মিউনিসিপালিটির আয়তন বৃদ্ধি করে ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার এবং ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করে ওয়ার্ড সংখ্যা ৯ থেকে বাড়িয়ে ১২টি করে তৎকালীন সরকার।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন : নওগাঁ পৌরসভা : নামেই প্রথম শ্রেণির 

সরকারদলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঢাকায় ঘোষণা দিয়েছিলেন সরকার আরও সিটি করপোরেশন করার চিন্তা করছে। পরদিন এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়। সে সময় ১৩টি জেলার পৌরসভার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকায় বগুড়া ছিল। 

বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, আগে পৌরসভার আয়তন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর পুরাতন ১২টিসহ মোট ২১টি ওয়ার্ডে পৌরসভাকে সম্প্রসারণ করা হয়। তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সিটি করপোরেশন ঘোষণা করতে সীমানা সম্প্রসারণ করেছিল। কিন্তু তা হয়নি। বিএনপি নেতারা মনে করেন, দলের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী মহল এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এদিকে পৌরসভার আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ বর্গকিলোমিটার। বর্তমান ভোটারসংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার। দিনদিন এই শহরে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বগুড়ায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে আশপাশের জেলার মানুষ। একই সঙ্গে অভাবী এলাকার দিনমজুররা আসছে। অন্য স্থান থেকে এসে বগুড়ার বাসিন্দা হয়েছেন এমন উল্লেখযোগ্য জেলার মধ্যে রয়েছে রংপুর, কুষ্টিয়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, যশোর, নোয়াখালী ও পাবনা। 


বিজ্ঞাপন


সরকারের কাছে বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে বার বার সিটি কর্পোরেশনের দাবি জানানো হলেও তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে গত ১২ বছরে বর্তমান সরকার রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করেছে। কিন্তু এখনও পৌরসভাই রয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ এই পৌরসভাটি। অথচ সিটি করপোরেশনে উন্নীতকরণের শর্ত অনেক আগেই পূরণ করেছে বগুড়া। শুধুমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে বগুড়া সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে নাগরিক সমাজের অভিমত।

বগুড়া পৌরসভার বর্তমান স্থায়ী জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ এবং ভোটার পৌনে ৩ লাখ। পৌরসভার নিজস্ব আয় দিয়ে বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নিয়ম নেই। তাই বিশাল জনগোষ্ঠী আজও কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তখনকার ১২টি ওয়ার্ডের রাস্তা, ড্রেন, কালভার্টসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু পৌরসভার আয়তন বাড়ার পর সম্প্রসারিত ৯টি ওয়ার্ডের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তা নেই, ড্রেন নেই। তবে সড়কবাতি প্রায় সব খানেই রয়েছে। অনেক রাস্তা এখনও কাঁচা। বেশির ভাগ রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানায়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু নগদ অর্থের বরাদ্দ মিলেছে। এ ছাড়া সরকারের উন্নয়নসহায়তা বাবদ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রতি বছর গড়ে ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ মেলে। প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি সামান্য বরাদ্দ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে হিমশিম খেতে হয়। তাই কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নেই।

bogura
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা

বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পৌরসভায় জন্য উন্নয়নসহায়তা বরাদ্দ দরকার। বগুড়া পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হিসেবে অন্যান্য পৌরসভার মতোই বরাদ্দ পায়। এখানকার জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা নতুন কয়েকটি সিটি করপোরেশনের চেয়ে বেশি।

মেয়র আরও বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারে বগুড়াকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বগুড়াবাসীর এ ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সুশাসনে জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির তুহিন বলেন, শুধু সিটি করপোরেশন নয়, বগুড়াকে বিভাগ হিসেবেও ঘোষণা দিতে হবে। বরিশাল যদি মাত্র চারটি জেলা নিয়ে বিভাগ হতে পারে, তবে বগুড়া পারবে না কেন? এখানে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেশি। সরকার উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করে এখান থেকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের শহরও এটা। তাহলে বগুড়াকে বঞ্চিত করা হবে কেন? শুধু রাজনৈতিক রেশা রেশিতে এতো বড় পৌরসভা অবহেলিত। 

বগুড়ার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান জানান, উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার একটি প্রস্তাবনা অনেক আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়েছে। তিনি তাতে নীতিগতভাবে সমর্থনও জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে যেকোনো সময় বগুড়াবাসীর কাঙ্ক্ষিত এই দাবি পূরণ হতে পারে। 

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন গঠনের সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের। তাই এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর