শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নওগাঁ পৌরসভা : নামেই প্রথম শ্রেণির 

সুমন আলী
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

নওগাঁ পৌরসভা : নামেই প্রথম শ্রেণির 
ছবি : ঢাকা মেইল

৫৯ বছরের পুরানো নওগাঁ পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা, খানাখন্দ আর গর্তে ভরা, নর্দমাব্যবস্থা (ড্রেনেজ) বেহাল, জলাবদ্ধতা, নেই সড়কবাতি। তাই নিয়মিত কর পরিশোধ করেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। তবু প্রথম শ্রেণির মর্যাদা নিয়ে চলছে পৌরসভাটি।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০-তে দ্বিতীয় এবং ১৯৮৯ ‘ক’ প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়। এর লোকসংখ্যা বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ। আয়তন প্রায় ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভার মোট ওয়ার্ড স্যংখ্যা ৯টি এবং মহল্লা ৫৬টি।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, পৌরসভার ২০টি প্রধান সড়কসহ পাড়া-মল্লার ভেতর দিয়ে আরও ৮০টির বেশি সড়ক আছে। এসব সড়কের ১৩০ কিলোমিটার অংশ পাকা। আধা পাকা (ইট বিছানো) রয়েছে আরও ৪০ কিলোমিটার অংশ। কাঁচা রাস্তা প্রায় ১২০ কিলোমিটার।

NAOGAOAN

শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড-আলুপট্টি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সড়কটির ইট, বালু ও খোয়া উঠে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ডিগ্রি কলেজ-থানা মোড় সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই ইট-খোয়া উঠে গেছে। জনকল্যাণ মোড় থেকে ইদুর বটতলী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরো অংশজুড়েই ইট-বালু, ঢালাই ও বিটুমিন উঠে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাজের মোড়-বিডিআর ব্রিজ সড়ক, বটতলী মোড়-বাইপাস সড়ক, তাজের মোড়-বউবাজার, ব্রিজের মোড়-কালিতলা, জনকল্যাণ মোড়-দুর্গাপুর, বাটার মোড়-গোস্তহাটির মোড়-কালিতলা, সুলতানপুর-লস্করপুর, পলিটেকনিক্যাল মোড়-আরজি নওগাঁ সড়কের অবস্থাও বেহাল। এমনকি পৌরসভার সামনের রাস্তারও একই অবস্থা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  এতো বছর পরেও পৌরসভায় প্রকৃত নাগরিক সুবিধা তৈরি হয়নি। ‘ক’ শ্রেণির এই পৌরসভার উন্নয়নে তেমন কোনো পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করেও সেবা পাচ্ছেন না পৌরবাসী। এরমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো—ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক নাই, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নাই, স্যুয়ারেজ লাইন নাই, পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা নাই, সিসি ক্যামেরা নাই, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নাই, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়নে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফলে পৌরবাসীর ক্ষোভ দিন দিন বেড়েছে।


বিজ্ঞাপন


পৌরবাসী বলছেন, প্রতিবার নির্বাচনের আগে পৌরসভার মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিরা নানা সমস্যা নিরসনের আশ্বাস দেন। বছরের পর বছর গেলেও ভালো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বিভিন্ন সময় সমাধান চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিলেও লাভ হয়নি বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।

কালিতলা এলাকায় রিকশাচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, শহরে এমন কোনো রাস্তা নেই, যেখানে ভাঙাচোরা নাই। রিকশা চালাতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। কবে এসব রাস্তাঘাট ঠিক হবে।

naogaon

ইদুরবটতলীর বাসিন্দা জুলফিকার আলী অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভা হলেও আমরা নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটের আগে নানারকম সুযোগ সুবিধার আশ্বাস দিলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

আরজি নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা শাকিল বলেন, পৌরবাসী নিয়মিত কর পরিশোধ করলেও কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না। কোন লাইটিংয়ের ব্যবস্থা নাই। একদিন লাইট চললে আরও এক সপ্তাহ অচল হয়ে থাকে। 

নওগাঁর একটি সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারি বলেন, পৌরসভা নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই আমরা দেখতেছি পৌরবিধি অনুযায়ী কিছুই হয় না এখানে। শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক নাই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক নাই। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। অপর্যাপ্ত আলোসহ নানা সমস্যা রয়েছে পৌর এলাকায়। এত বছরেও নওগাঁ পৌরসভা নাগরিক সেবার কাঙ্খিত জায়গায় একেবারে পৌঁছাতে পারেনি।সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল নওগাঁ শহরের ছোট যমুনার পাশে বসবাস করা বাসিন্দাদের টয়লেটের লাইনগুলো নদীতে নিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে নদীও নষ্ট হচ্ছে।

naogaon

তিনি আরও বলেন, আগামী ১০০ বছরে এই পৌরসভা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এটার একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার। নওগাঁ পৌরসভাকে একটা আদর্শ এবং বাসযোগ্য পৌরসভা হিসেবে তৈরি করতে হলে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন। পর্যায়ক্রমে সেই মাস্টারপ্ল্যান দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। না হলে সামনের দিনে নওগাঁ পৌরসভার আরও ভয়াল চিত্র দেখা যাবে।

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান, বলেন নওগাঁ পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির হলেও আমাদের যেরকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা আমরা পাই না। বর্জ্য অপসারণ, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা নাই। আমাদের এগুলো এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে।

naogaon

তিনি বলেন, নওগাঁ পৌরসভার নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না। মনিটরিং হলে পৌরবাসী এসব সুযোগ সুবিধা পাবে। পৌরসভার যে বাজেট হয় সেটা দেখতে হবে। বাজেটে পৌরবাসীর জন্য কি কি তারা কাজ করতে চায় এর একটি তালিকা দরকার। এবং এই তালিকার জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। পৌরবাসীর সুযোগ সুবিধার জন্য তারা কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।

পৌরবাসীর এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেশকিছু প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মান সম্পূর্ণ করা হয়েছে। তবে বর্ষার সময়ে স্বাভাবিকভাবেই ড্রেনের কিছু সমস্যা হয়। এরইমধ্যে ড্রেন পরিষ্কার কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজগুলো শেষ হলে নওগাঁ শহরের জলাবদ্ধতা থাকবে না।

তবে সড়কের বেহাল অবস্থা স্বীকার করে মেয়র বলেন, কিছু রাস্তার অবস্থা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের একটি করে মোট ১৩টি রাস্তা এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র নওগাঁ বাজারের চারটি রাস্তা আরসিসি ঢালায়ের রাস্তা নির্মানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া অন্যান্য সমস্যাগুলোর দিকেও পৌরসভার নজর আছে। আশা করছি বরাদ্দ পেলে সেগুলো খুব দ্রুতই সমাধান হবে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর