মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জয়পুরহাটে অবৈধ ভটভটির ছড়াছড়ি, ভোগান্তিতে মানুষ

জনি সরকার
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

জয়পুরহাটে অবৈধ ভটভটির ছড়াছড়ি, ভোগান্তিতে মানুষ
ছবি : ঢাকা মেইল

জয়পুরহাটে শ্যালো মেশিনচালিত ঝুঁকিপূর্ণ ভটভটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে এসব যানবাহন। বেপরোয়া ও উচ্চগতিতে গাড়ি চালানো, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব চালকদের নেই প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। তাদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষকে চলাচলের সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। এমনকি ভটভটির চাপে বেকার বাস ও অন্যান্য পরিবহন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈধ যানবাহনের মালিক ও শ্রমিকরা। 

পরিবহন মালিকদের অভিযোগ, প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তারা। মালিকরা জানায়, এসব ভটভটি থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের ইন্ধনেই এসব যানবাহন জেলা শহরের প্রধান সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। 


বিজ্ঞাপন


jaipurhat

স্থানীয়রা জানান, সাধারণ মানুষের মালামাল সরবরাহের সুবিধা ও কম খরচের পরিবহন হিসেবে ঝুঁকি নিয়ে চালানো হচ্ছে শ্যালো মেশিনচালিত নছিমন-করিমন-ভটভটি। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে রাখার কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে কয়েকগুণ। এতে ঘটে দুর্ঘটনা, ব্যাহত হয় অন্য যানবাহন চলাচল। 

ভটভটির জন্য শহরে নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। এসব যান জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তোয়াক্কা করছে না চালকরা। জয়পুরহাট শহরে গড়ে ওঠা নতুনহাটের গরু কেনাবেচায় হার্টের আশপাশে পাড়া-মহল্লায় যত্রতত্র ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রাখা হয় এসব ভটভটি। এতে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। 

এমন বেপরোয়া চলাচল আর দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে চান তারা।


বিজ্ঞাপন


jaipurhat

জেলায় ভটভটির সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও স্থানীয় ভটভটি মালিক শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ভটভটি রয়েছে। অবৈধ এসব ভটভটি থেকে মালিক সমিতির নামে গাড়িপ্রতি প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছে প্রভাবশালীরা। এই চাঁদার অর্ধেক যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটে। বাকি অর্ধেক যাচ্ছে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে চাঁদার রসিদ বই কিনে নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে যারা চাঁদা তুলছে তাদের পকেটে। 

পথচারী জালাল উদ্দীন বলেন, ভটভটির বেপরোয়া চলাচলের কারণে শহরে রাস্তায় ভোগান্তি হয়। ঠিকমতো চলাফেরাও করা যায় না। কিছু দিন আগে আমি বাইসাইকেল নিয়ে ব্যাংকের কাজে যাচ্ছিলাম, যাওয়ার পথে ভটভটি আমার উপরে উঠিয়ে দেয়, আমি ছিটকে পড়ে আহত হই।

মোটরসাইকেল আরোহী মিঠু বলেন, ভটভটিগুলো মেইন শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে না দিয়ে যদি শহরের আগে বিভিন্ন জায়গায় পয়েন্ট করে দিতো, তাহলে যানজট ও জনগণের ভোগান্তি হবে না।

>> আরও পড়ুন : নির্মাণের আড়াই বছরেও চালু হয়নি কালকিনি পৌর বাস টার্মিনাল

হাটের আশেপাশের প্রফেসরপাড়া, নতুনহাট, দেওয়ানপাড়া, চিত্রাপাড়া, মুজিবনগর, সরদারপাড়া, জামালগঞ্জ রোড়, সরকারি কলেজ এলাকা, শেখপাড়ার বাসিন্দারা বলেন, আবাসিক এলাকায় এই হাট গড়ে উঠেছে। হাটে আসা লক্করঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ নছিমন-করিমন-ভটভটি এসে পাড়ার অলিগলিতে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রেখে যানজটের সৃষ্টি করে। হাটের দিনগুলোতে বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না। বাচ্চারা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না। হাটের আশপাশে প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকায় এসব অবৈধ যানবাহন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে।

jaipurhat

জয়পুরহাট জেলা পিকআপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার সাহা বলেন, 'এসব ভটভটি যারা চালায়, তাদের প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স কিছুই নাই। তারা সরকারকে কোনো রকম অর্থও দেয় না। আমরা রুট পারমিট, লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্স সরকারকে দিয়ে পিকআপ চালাই। এই ভটভটির কারণে পিকআপ মালিকদের ব্যবসা একেবারে রাস্তায় পড়ে গেছে। অবৈধ এসব ভটভটি অপসারণ করা দরকার। না হলে আমরা পথে বসে যাব।'

জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেদারুল ইসলাম বেদীন বলেন,' জয়পুরহাট শহরে যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা। এর মধ্যে এসব অবৈধ ভটভটি পাড়া মহল্লায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি করছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বহুবার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রভাবশালীদের কারণে বাস্তবায়ন হয়নি।’

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নুরে আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । হাটের দিনগুলোতে গরু নিয়ে জেলা শহরে চারটি রাস্তা দিয়ে ঢোকার কারণে যানজট তীব্র হয়। শহরে প্রবেশ করার আগেই চারটি পয়েন্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই পয়েন্টেগুলোতে এসব গাড়ি দাঁড়াবে এবং গরুগুলোকে হেঁটে নিয়ে হাটে ঢুকবে। আশা করছি শহরের বাসিন্দারা যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।’

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর