রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

তাইওয়ানের রেড লেডি এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে দারুণ জনপ্রিয়

প্রান্ত দেবনাথ রনি
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৩:৫৫ এএম

শেয়ার করুন:

তাইওয়ানের রেড লেডি এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে দারুণ জনপ্রিয়

আক্ষরিক অর্থ যা-ই হোক না কেন ‘রেড লেডি’ মূলত পেঁপের একটি জাত। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন এই জাতের পেঁপে চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলটির বাইরের অংশ দেখতে দেশী অন্যান্য পেঁপের মতো সবুজ হলেও ভেতরের রূপ আসলেই রাঙা রমণী (Red Lady) শব্দটিকে মনে করিয়ে দেবে। পাকা রেড লেডি পেঁপের বাইরের অংশ কিছুটা হলুদ আবার সবুজ রংয়ের হয়, আর ভেতরের অংশ গাঢ় লাল রংয়ের। এটি দেখতে যেমন নজর কাড়া স্বাদেও অনন্য। আর সেটা যদি হয় পাহাড়ে চাষকৃত তাহলে তো কথাই নেই। বর্তমানে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সব উপজেলাতেই রেড লেডি পেঁপে চাষ হচ্ছে।

শুধু রূপে গুণে নয়— দেশীয় জাতের পেঁপে থেকে রেড লেডি পেঁপের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সুবিধাও অনেক বেশি। তাই দেশীয় পেঁপের চেয়ে এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষিদের কাছে রেড লেডি জাত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জনপ্রিয়তা বাড়ছে দেশের অন্যান্য এলাকার চাষিদের কাছেও।
red ladyরেড লেডি মূলত তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপের জাত। কৃষিবীদদের মতে, পেঁপের এ জাতটি বাংলাদেরশের আবহওয়াতেও চাষের জন্য উপযোগী।


বিজ্ঞাপন


এই পেঁপে চাষের বিষয়ে কথা হয় পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে। ২০২১ সালে বাড়ির আঙিনায় ‘রেড লেডি’ জাতের পাঁচ শতাধিক পেঁপের চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। এক বছরের মাথায় তার বাগানে ফলন এসেছে প্রায় শ’খানেক পেঁপে গাছে। তবে এখনও ফল না পাঁকলেও কাঁচা পেঁপে বিক্রি করেছেন ১২ হাজার টাকা।
red lady farmerজানালেন, পুরো বাগান তৈরিতে আনুষাঙ্গিক সব খরচ মিলে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দেড় লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তিনি।
 
সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কারবারি পাড়ার বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা ঢাকা মেইলকে জানান, নিজের বাড়ির আঙিনায় প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। গত বছর নিজ উদ্যোগে রেড লেডি পেঁপের বাগান গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ কাজে পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা।

>>আরও পড়ুন: রসে ভরা রাঙামাটির ‘হানিকুইন’

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমি বাড়ির আঙিনায় মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলি। আঙিনা জুড়ে প্রায় ১০ একর জায়গায় মিশ্র ফল চাষ শুরু করি। তবে ২০২১ সাল থেকে এই বাগানে ৫০০ শতাধিক রেড লেডি পেঁপে গাছের চারা লাগিয়েছি। এক বছরের মাথায় প্রায় শতাধিক গাছে ফলন এসেছে।’
red lady‘মূলত আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই পেঁপে পাকে। ফল আসায় তবে অনেক পেঁপে গাছ ভারী হয়ে গেছে। গাছ ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় ফলন পাতলাকরণের কার্যক্রম হিসেবে ১০ মণ কাঁচা পেপে ইতিমধ্যে বিক্রি  করে দিয়েছি৷ এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি।’

এই কৃষি উদ্যোক্তা জানান, রেড লেডি জাতের পেঁপে গাছ থেকে ৩-৪ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তাই ৫০ হাজার খরচ হলেও দেড় লাখ টাকার ফল বিক্রয় করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা তার।


বিজ্ঞাপন


উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার বাগানে এলাকার বেকার যুবকরাও কর্মসংস্থান পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুশান্ত। বলেন, বাগানে পুরোদমে কাজ থাকলে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। আর অন্যান্য সময়ে ৬-৭ শ্রমিক কাজ করে থাকেন। প্রতিজন শ্রমিককে দৈনিক পারিশ্রমিক হিসেবে ৪০০ টাকা মজুরি দিতে হয়।
red ladyকৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল ঢাকা মেইলকে জানান, দেশীয় জাতের পেঁপে থেকে রেড লেডি পেঁপের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সুবিধা অনেক ভালো। দেশীয় জাতের পেপে পাঁকলে সহজে নরম হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে রেড লেডি দীর্ঘ স্থায়ী হয়। যে কারণে দেশীয় পেঁপের চেয়ে এখন রেড লেডি জাত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সব উপজেলাতেই রেড লেডি পেঁপে চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা একজন আগ্রহী মানুষ। তিনিও রেড লেডি চাষাবাদ করেছেন, সফল হবেন বলে আশা করি।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর