কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ‘প্রথম স্ত্রীর ভূয়া অনুমতি সনদ দেখিয়ে’ এবং কিশোরীকে ‘ফুসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে’ বিয়ের (বাল্য বিয়ে) চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইসকে আব্দুল্লাহ (৫৪) নামের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কনের বাড়িতে আসলে তাকে ‘গণধোলাই’ দেওয়া হয় বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দি গ্রামে বিয়ে করতে যান তিনি। পরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জনতার রোষানল থেকে তাকে উদ্ধার করেন রৌমারী সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের দাবি, প্রথম স্ত্রীর ভূয়া অনুমতি সনদ ও কিশোরীকে ফুসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে আসায় ওই কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা সদরের সুইহারী (খালপাড়া) গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ইসকে আব্দুলাহ ঠাকুরগাঁও জেলার রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
>> আরও পড়ুন: পিটুনির শিকার স্ত্রীর মৃত্যু দেখে পালিয়ে গেল স্বামী
শৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য ইউনূছ আলী জানান, ‘২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শৌলমারী এমআর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ। সেসময় কেন্দ্রেই পরিচয় হয় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে। পরে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বরও নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কল দিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে তিন সদস্যের বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে। এসময় তিনি প্রথম স্ত্রীর ভূয়া অনুমতির প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসেন। তার সঙ্গে আসা দুই খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান) বিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি হননি। এমনকি তার কোনো স্বজনও আসেননি এবং ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এসময় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায় তাকে গণধোলাই দেয়। পরে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা বিয়ে করতে এসে জনতার রোষানলের শিকার হয়েছেন। পরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।’
>> আরও পড়ুন: ৩ নম্বর সংকেত: কক্সবাজারে সমুদ্রে নামতে মানা
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার স্ত্রী কামরুন আরার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এক মেয়ের বিয়েও দেওয়া হয়েছে। আরেক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত এবং ছেলে সন্তান দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি আরও জানান, তার স্বামী কিছু দিন ধরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেন এবং বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। ‘এ নিয়ে দিনাজপুর থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে।’
অভিযুক্ত রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার প্রথম স্ত্রীর দু’টি অপারেশনের কারণে সে শারীরিকভাবে অপারগ। ফলে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে আসছি। মেয়ের বয়স কম, এটা আমার জানা ছিল না। তাই একটু হট্টগোল হয়েছে।’
>> আরও পড়ুন: আঁচাফারাম আখের জন্য বিখ্যাত রাণীনগরের শতবর্ষী ত্রিমোহনী হাট
ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বরযাত্রী হিসেবে আসা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘তিনি তার এক আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে আমাদেরকে রৌমারীতে নিয়ে আসেন। পরে দেখি তিনি বিয়ে করার উদ্দেশ্যে এসেছেন। এসময় আমাদের দু’জনকেই বিয়ের সাক্ষী হতে বলেন। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, বাল্য বিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সাথে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় রৌমারী সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালুর সহযোগিতায় আমরা ঘটনাস্থল থেকে সরে আসি।’
>> আরও পড়ুন: পরিচয়হীন মধ্যবয়সী ২৮ মাস ধরে কারাগারে
ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘কুড়িগ্রাম সদরে ৩০ শতক জমিতে বাড়ি করে দেবেন। ১০ ভরি স্বর্ণাঙ্কারসহ মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আমার কোমলমতি মেয়েকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তার প্রথম স্ত্রীর ভূয়া অনুমতি সনদসহ দু’জন লোককে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।’
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দু’দিনের ছুটিতে রয়েছেন।’ এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিনিধি/এজে/এএ