নামের আগে ডাক্তর লেখা। নিয়মিত রোগীও দেখছেন। প্রেস্ক্রিপশনে লিখে দিচ্ছেন ওষুধ। আবার সেই ওষুধ কিনতে হবে ডাক্তারের নিজ দোকান থেকে। যদিও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। এভাবেই প্রতিনিয়ত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেহন বাজারের নুরুজ্জামান বাবুল ওরফে ‘ডাক্তার বাবুল।’
দেখা গেছে, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দেহন বাজারে একটি ওষুধের দোকানের সঙ্গে ডাক্তারের চেম্বারের সাইনবোর্ড। তাতে লেখা— ‘ডাক্তার নুরুজ্জামান বাবুল, ডিএমএফ ঢাকা।’ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পযর্ন্ত ও বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮ পযর্ন্ত রোগী দেখা হয় বলে চলছে মাইকিংও। এই ‘ডাক্তারে’র কাছে চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
>> আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাবের ব্যবসায় কোটি টাকা
বিজ্ঞাপন
বাবুলের কাছে চিকিৎসা নেওয়া ভুক্তভোগী রাজ্জাক বলেন, ‘আমার জ্বর হয়েছিল। আমি তার কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে তিনি আমাকে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে দেন। তবে আমার এক পরিচিত বড়ভাই ওষুধগুলো দেখেই খেতে নিষেধ করেন এবং আমাকে অন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলেন। পরে অন্য ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল খেয়ে আমি সুস্থ হই।’
রাবেয়া খাতুন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি মাথা ব্যাথার কথা জানিয়ে তার কাছে পরামর্শ চাই। তিনি অনেকগুলা ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু সুস্থতার বদলে আমি আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। পরে শহরের এক মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ নিই। সেই ডাক্তার পূর্বের খাওয়া ওষুধগুলো ভুল ছিলো বলে জানান।’
>> আরও পড়ুন: সবাই আমাকে মুড়ি ভর্তার মাসুদ মামা নামে চেনে
এলাকার ব্যবসায়ী আলতাফুর বলেন, ‘বাবুল আমাদের সামনেই বড় হয়েছে। আমরা জানি ও প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পার হয়নি। তাই আমরা তার কাছে চিকিৎসা নিই না। তবে অনেকে অজান্তে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে। চিকিৎসার মতো এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাবধান থাকা উচিত। দ্রুতই এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বড় বিপদ হতে পারে।’
এ বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত বাবুলের সঙ্গে। ডাক্তারি পড়ালেখা বা কোনো প্রকার প্রশিক্ষণের কাগজ দেখতে চাইলে, ‘নেই’ বলে অকপটে স্বীকার করেন বাবুল। সেই সঙ্গে চেম্বারের পাশে থাকা ‘ওষুধের দোকানের লাইসেন্সও নেই’ বলে স্বীকার করেন তিনি।
>> আরও পড়ুন: মৃত্যুর ৩ বছর পর আবার সড়ক দুর্ঘটনায় জাহানারার মৃত্যু!
বলেন, ‘যেইখানে ব্যানার করছি সেইখানে ভুল করে ডা. লিখে ফেলছে। আর মেডিসিন চিকিৎসক লিখছে। আর এই এলাকার আশেপাশে কোনো ডাক্তার নেই। তাই আমি যা চিকিৎসা দিচ্ছি তাতে মানুষের উপকার হচ্ছে।’
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/এএ