ল্যাম্প পোস্টের আলোর মাঝে দূর থেকে মনে হবে জটলা। এগিয়ে গেলে পরিস্কার বোঝা যাবে ক্রেতারা ঘিরে ধরেছেন অ্যাপ্রোন পরিহিত একজনকে। তিনিও খুব দ্রুত গতিতে হাত চালাচ্ছেন। বড় একটি পাত্রে প্রথমে মুড়ি ও ডাল সিদ্ধ, এরপরে বিভিন্ন মসলার সমন্বয়ে তৈরী তেল ঢালেন। একে একে দেন প্রয়োজনমতো কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ এবং লেবু। তারপর বিট লবণ ও উপাদান দেন। সব কিছু দেওয়া হলে চলে কয়েক দফা ঘুটুনি। প্রস্তুত হয় মাসুদ মামার মুড়ি ভর্তা।
এবার চাহিদামতো ক্রেতাদের পরিবেশনের পালা। সঙ্গে দেন পুরু কাগজ কেটে বিশেষভাবে তৈরি চামচও। কাজের মাঝে তেমন কথা বলার সুযোগ নেই তার। তাকে ঘিরে থাকেন ক্রেতারা। কয়েকজনকে দিতে দিতে আরও লোকজন চলে আসেন। এভাবেই ৩ ঘণ্টা চলে তার মুড়ি ভর্তার ব্যবসা।
রংপুরের টাউনহল চত্বরের প্রবেশমুখেই তার ভ্রাম্যমাণ ঠেলাভ্যান। ভ্যানে সাজানো মুড়ি ভর্তার উপাদান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঠেলাভ্যান নিয়ে আসেন তিনি। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় তার মুড়ি ভর্তা বিক্রি।
‘মাসুদ মামা’র মূল নাম মাসুদ রানা (৪৫)। দুই ছেলে এবং স্ত্রীসহ বসবাস করেন রংপুর নগরীর খটখটিয়া এলাকায়। মাসুদ রানা প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসা করেন। শুরুতেই ১ টাকার মুড়ি ভর্তা বিক্রি করতেন। এখন সর্বনিম্ন মুড়ি ভর্তা ১০ টাকা। তিনি এই মুড়ি ভর্তা সকালে পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এবং সন্ধ্যায় টাউনহল চত্বরে বিক্রি করেন। সকালে ৪-৫ হাজার টাকা এবং সন্ধ্যায় ৩-৪ হাজার টাকার মুড়ি ভর্তা বিক্রি করেন বলে জানালেন মাসুদ রানা। জানান, মুড়ি ভর্তা বিক্রির আয় দিয়েই চলে তার সংসার।
বিজ্ঞাপন
এই মুড়ি ভর্তা এখন রংপুরের সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে মুখরোচক ও জনপ্রিয় খাবার। দূর-দুরান্ত থেকে অনেকেই আসেন এই মুড়ি ভর্তা খেতে। টক-ঝাল-মিষ্টি মুড়ি ভর্তার প্রশংসা করে অনার্সের শিক্ষার্থী ইকবাল মাহমুদ বলেন, মাসুদ মামার মুড়ি ভর্তা স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খাই। প্রায় প্রতিদিনই খাই। ভালো লাগে।
চাকুরীজীবি তুহিন জানান, শহরে আসলেই মাসুদ মামার মুড়ি ভর্তা খেতে আসেন তিনি; বাড়ির জন্যও নিয়ে যান।
সংস্কৃতি কর্মী লিজা রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর বন্ধুদের নিয়ে মুড়ি ভর্তা খেতে খেতে আড্ডা দেয়ার মজাই আলাদা। মাসুদ মামা বেশ যত্ন করে মুড়ি ভর্তা বানান।
আলী হায়দার রনি নামের এক সাংবাদিক ঢাকা মেইলকে জানান, তিনি সন্ধ্যায় প্রায় সময় হাঁটতে হাঁটতে টাউনহল চত্বরে এই মাসুদ মামার মুড়ি ভর্তা খেতে আসেন।
মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ মামা ঢাকা মেইলকে বলেন, মুড়ি ভর্তা প্রায় ৩০ বছর ধরে বিক্রি করি। সবাই আমাকে মুড়ি ভর্তার মাসুদ মামা নামে চেনে। যেখানেই যাই কেউ না কেউ পরিচিত বের হবেই। সন্ধ্যায় টাউনহল চত্বরে অনেক দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন এই মুড়ি ভর্তা খেতে। তবে তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই বেশি।
প্রতিনিধি/এএ