বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রাঙামাটিতে আশ্রয়ণের ঘর পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৯:৩৭ এএম

শেয়ার করুন:

রাঙামাটিতে আশ্রয়ণের ঘর পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে দোচালা টিনের ঘর

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলসাখালী ইউনিয়নের দুর্গম গুরুসুতাং পাহাড়। এই পাহাড়ের লুংথাই পাড়া ও তাংপুই পাড়ায় ১৮টি জুম চাষি পরিবারের বসবাস। দুর্গম এই এলাকার সব পরিবার থাকছেন মাচাং ঘর (টং ঘর) করে। সেখানে এখনো পৌঁছায়নি আশ্রয়ণের ঘর। দুর্গমতার কারণে এই এলাকার জুমিয়া পরিবারগুলোর সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। শুধু লংগদুর গুরুসুতাং পাহাড়ের মানুষই নয়; জেলার বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়িসহ অন্যান্য দুর্গম এলাকার পাহাড়িরাও আশ্রয়ণের ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গুরুসুতাং পাহাড়ের স্থানীয় মৌজাপ্রধান (হেডম্যান) বিয়াকথাং পাংখোয়া বলেন,  ‘আমরা এই পাহাড়ে যারা বসবাস করি সবাই জুম চাষি। উপজেলার একটি দুর্গম এলাকাহলো গুরুসুতাং পাহাড়। এই এলাকার জুমিয়া পরিবারগুলো সব সময় অধিকার বঞ্চিত। শিক্ষা, চিকিৎসা, সুপেয় পানি ও নিরাপদ বাসস্থান পর্যন্ত নেই।’


বিজ্ঞাপন


বিলাইছড়ি উপজেলার ধূপ্পারচর এলাকার বাসিন্দা অসীম চাকমা জানান, বিলাইছড়ির উপজেলার অনেক দরিদ্র পরিবার এখনো সরকারি ঘর পাননি। দেখা গেছে স্থানীয়ভাবে যারা বেশি দরিদ্র, দিনে-আনেন দিনে খান; এ ধরনের মানুষও বাদ পড়েছেন। আমার এলাকাতেও এমন পরিবার আছে।

আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক। সাজেক ইউনিয়নের সদ্যসাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, সাজেক ইউনিয়নের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাস ও দুর্গম হওয়ায় এই এলাকার মানুষ খুব বেশি বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ সরকারের এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এমন উদ্যোগে পশ্চাৎপদ ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হচ্ছে। তিন পর্যায়ে এ পর্যন্ত রাঙামাটি জেলার প্রায় দেড় হাজার ঘর করে দেওয়া হলেও সরকারি হিসাবেই এখনো ঘর পাননি অর্ধেক গৃহহীন পরিবার। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির কারণে আশ্রয়ণের ঘর পাচ্ছেন না পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ।

ranggamati


বিজ্ঞাপন


জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার দশ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৯০৭টি। গৃহপ্রদান কার্যক্রমের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়- তিনটি পর্যায়ে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭টি ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। জেলার আরও ১ হাজার ৪৩০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এখনো সরকারি ঘর পায়নি। ২ হাজার ৯০৭টি গৃহহীন পরিবারের কথা বলা হলেও প্রকৃতভাবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলছেন স্থানীয়রা। তবে প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে আশ্রয়ণের নির্মিত গৃহসমূহের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ঘরপ্রতি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে পরবর্তীতে গৃহ নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে এসে ঘরপ্রতি বরাদ্দ হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫’শ টাকা। সে হিসাবে ধাপে ধাপে এ পর্যন্ত সর্বমোট বরাদ্দ বেড়েছে ৮৮ হাজার ৫০০।

ভৌগোলিক ও পরিবেশগত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম ও পশ্চাৎপদ অঞ্চল বলা হয়ে থাকে রাঙামাটিকে আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়িসহ দশ উপজেলা গঠিত রাঙামাটির যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগ, নির্মাণ ব্যয়ে চাহিদার চেয়ে অপ্রতুলতা, সংকটাপন্ন পরিস্থিতির কারণে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর গৃহহীনরা সরকারি আশ্রয়ণের ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহহীনদের জন্য সরকারি ঘর নির্মাণে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

রাঙামাটির নাগরিক আন্দোলনের নেতা এম জিসান বখতেয়ার জানান, সরকারি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে দুর্গম অঞ্চলের গৃহহীনরা এই উদ্যোগ থেকে বেশিরভাগ বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদেরকেও সুবিধার আওতায় আনতে প্রয়োজনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করে হলেও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সারাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই বরাদ্দে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট নিরসন সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।

রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রাঙামাটিতে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৯০৭টি। তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের ৩২টিসহ এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭টি পরিবারকে গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুর্গম এলাকায় গৃহ নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলাপ্রশাসক বলেন, আপাতত বেশি দুর্গম এলাকাগুলোতে এই প্রকল্পের অধীন গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে না।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর