বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বাসে ধর্ষণ: বার বার ছেড়ে দিতে আকুতি জানিয়েও রেহাই পাইনি

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২২, ০৬:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বাসে ধর্ষণ: বার বার ছেড়ে দিতে আকুতি জানিয়েও রেহাই পাইনি

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে পুলিশি পাহারায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার নিজে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ভুক্তভোগী ওই নারী। পরে ডাকাতি ও ধর্ষণের পুরো ঘটনা জানান।


বিজ্ঞাপন


ওই নারী জানান, কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের নাইট কোচটিতে চড়ে নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছিলেন তিনি। সেখানেই চাকরি করেন। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় যাত্রা শুরু করে বাসটি। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে যাত্রাবিরতির পর আবারও গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। তবে বাসটি গেটলক সার্ভিস হলেও রাস্তায় সিগনাল দিয়ে তিন দফায় ১০ জন তরুণ ওঠেন।

পরবর্তীকালে বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হলে ভুক্তভোগীসহ বাসে থাকা অন্য যাত্রীদের হাত-পা, মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলেন যাত্রীবেশে ওঠা ডাকাত দল। এরপর একে একে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করতে থাকেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমি ছিলাম মাঝখানের দিকের সিটে। এক ডাকাত এসে আমার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। বাসে থাকা শিশুদেরও হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। কাউকে মারধরও করা হয়। কিছুক্ষণ পর আরেক ডাকাত এসে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করতে থাকেন। পরে বিপদ আঁচ করতে পেরে বার বার ছেড়ে দিতে আকুতি জানাই। কিন্তু তাতে রক্ষা হয়নি।’

পরে একে একে ছয়জন ডাকাত ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। তবে ভুক্তভোগী জানান, ঘটনার সময় তার মতো আর কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তা তিনি বলতে পারবেন না। কারণ, তিনিসহ যাত্রীদের সবারই চোখ বাঁধা ছিল।


বিজ্ঞাপন


ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে টাঙ্গাইল জেনা‌রেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সা‌দিকুর রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, ‘মেয়েটি হাসপাতালে রয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ওই নারীর সোয়াব টেস্টের জন্য নমুনা নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। সে‌টি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় এমন আঘা‌তের সৃষ্টি হ‌য়ে‌ছে ব‌লে ম‌নে করা হ‌চ্ছে। তার চিকিৎসা চল‌ছে। সোয়াব টেস্টের রি‌পোর্ট পে‌লে ধর্ষণের বিষয়‌টি নিশ্চিত হওয়া যা‌বে।’

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ, গ্রেফতার ১

এর আগে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। সেখানে তিনি জানান, এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই গ্রেফতার ত্রিশোর্ধ্ব রাজা মিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার বাসিন্দা। তিনি টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। বুধবার (৩ আগস্ট) রাতে টাঙ্গাইল শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ছিনতাই করা তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, রাজা মিয়া টাঙ্গাইল-চন্দ্রা পথে চলাচলকারী ঝটিকা পরিবহনের বাসের চালক। বাসটির মূল চালক মনিরুল ইসলাম মনিরকে সরিয়ে রাজা মিয়া বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেন। মনিরকে তখন বাসের পেছনে বেঁধে রাখা হয়। পরে রাজা মিয়াই তিন ঘণ্টা ধরে বাসটি চালিয়েছেন। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে রাজা মিয়া তার অপর সঙ্গীদের নাম পুলিশকে বলেছেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ, ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিনিময় পরিবহনের চলন্ত বাসে এক পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনায় সে সময় ভুক্তভোগী স্বামী বাদী হয়ে তিনজনের নামে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই বাসের চালকসহ দুই সহকারীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে এক নারীকে ছোঁয়া পরিবহনের চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ছিলেন।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর