টাঙ্গাইলে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী যাত্রীবাহী বাস জিম্মি করে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় রাজা মিয়া (৩২) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চলন্ত বাসে ডাকাতি করার ঘটনা স্বীকার করেছে।
বিজ্ঞাপন
রাজা মিয়া জানিয়েছে, তারা ১০ জন মিলে ওই বাস জিম্মি করে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে সব কিছু ডাকাতি করেছে। এছাড়া বাসে থাকা এক নারীকে তার সহযোগীরা ধর্ষণ করেছে।
কুষ্টিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল বাসটি। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে পৌঁছালে এতে ১০-১২ জন যাত্রী ওঠেন। যাত্রীবেশে ওঠা এই যাত্রীরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাকি যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে অস্ত্রের মুখে টানা তিন ঘণ্টা জিম্মি করে রাখা হয় যাত্রীদের। এই পুরো সময় বাসটি চলন্ত অবস্থায় ছিল। এর মধ্যেই চলে ডাকাতি ও যৌন নির্যাতন। মধুপুরের কাছে এসে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হলে স্থানীয়রা এসে যাত্রীদের উদ্ধার করেন।
গতকাল বুধবার (৩ আগস্ট) ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে ছিনতাই করা বাসের যাত্রীদের সর্বস্ব লুটের পর নারী যাত্রীদের পালাক্রমে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্যদের এই ভয়াবহ কাণ্ডের শিকার হয়েছেন কুষ্টিয়া-চট্টগ্রাম চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের যাত্রীরা।
এ ঘটনায় বুধবার রাত ৮টার দিকে মধুপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন বাসের এক যাত্রী।
বিজ্ঞাপন
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসে মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী ছিলেন তাতে।
যাত্রীদের বরাতে ওসি বলেন, ‘বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবারের জন্য বিরতি দেয়। রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকরা ১০ থেকে ১২ জন তরুণ ওঠেন।
‘বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ওই তরুণরা অস্ত্রের মুখে একে একে সব যাত্রীদের বেঁধে ফেলে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা ও গয়না লুট করে নেয়। এরপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে।’
ওসি অভিযোগের বরাতে আরও জানান, বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে ওই দলটি। পরে পথ বদলে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ডিবিতে বাসটি উল্টিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ঈগল পরিবহনের ব্যবস্থাপক আয়নাল হোসেন থানায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারদের বেঁধে রেখে যাত্রীদের কাছে যা যা ছিল সব নিয়ে গেছে ডাকাতরা।’
ওসি জানান, ধর্ষণের অভিযোগ করা নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রতিনিধি/এইচই