বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নাটোরে এক টাকার মোড় : ১ টাকায় মেলে চা-মসলা পান

মো. লিটন হোসেন লিমন
প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২২, ০৬:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

নাটোরে এক টাকার মোড় : ১ টাকায় মেলে চা-মসলা পান
ছবি: ঢাকা মেইল

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় এক টাকার মোড় নামে একটি জায়গা আছে। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে এ মোড়ে এক টাকায় এককাপ চা ও একটি মসলাযুক্ত পান বিক্রি করেছেন রজব বেপারি লালন (৪৪) নামের এক ব্যক্তি। উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের সোবাহান বেপারির ছেলে তিনি। বর্তমানে উর্ধ্বগতির এই বাজারে যেখানে সব দোকানি ৫ টাকায় এককাপ চা ও ৫ টাকায় একটি মসলাযুক্ত পান বিক্রি করেন। সেখানে লালন নামমাত্র এক টাকায় এক কাপ চা ও এক টাকায় মসলাযুক্ত একটি পান বিক্রি করছেন। এ কারণে সবার কাছে নওপাড়া মোড় এখন ‘এক টাকার মোড়’ নামে পরিচিত পেয়েছে।

এক টাকায় চা ও এক টাকায় মসলাযুক্ত পান বিক্রির জন্য সারাদেশ বেশ অলোচিতও হয়েছেন তিনি। নাটোর জেলার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ তার দোকানে চা-পান খেতে আসেন। প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় তার।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেতলি থেকে গরম পানি ছাকনিতে ঢেলে চা বানাতে ব্যস্ত লালন। দোকানের সামনে চায়ের অর্ডার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন ক্রেতা। পাশেই টেবিলে সারিবদ্ধভাবে বসে অনেকে চা খাচ্ছেন। অনেকে লোকমুখে শুনে কৌতুহলে ১ টাকার মোড়ে এসেছেন

চা ও পান খেতে। চা থেকে পান বানানোসহ ক্রেতাদের সব চাহিদা তাকেই সামলাতে হয়। একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন ক্রেতাদের সামলাচ্ছেন তিনি। নেই কোনো সহযোগী। এভাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেই চলেছেন তিনি। অনেকে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে লালনের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। অনেকে আবার চা-পান খেতে খেতে লালনের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছেন।
nator 1 takar moreচা ও পান বানাতে ব্যস্ত লালনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি জানান, সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালে পঞ্চাশ পয়সায় চা ও পান বিক্রি শুরু করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে উপজেলার নওপাড়া মোড়ে দুই টাকায় এককাপ চা ও একটি মসলাযুক্ত পান বিক্রি শুরু করেন। মানুষকে ভালোবেসে প্রতিদিন চা ও পান খাওয়ানোর মধ্য তিনি তৃপ্তি পান বলে জানান। যার জন্য ২৯ বছর ধরে নামমাত্র এক টাকায় এককাপ চা ও এক টাকায় মসলাযুক্ত পান বিক্রি করে আসছেন তিনি।

জানালেন, প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৩০০ কাপ চা এবং ৮০০ থেকে ১০০০টি খিলি পান বিক্রি হয়। দোকান থেকে সারাদিন যা উপার্জন হয় তা দিয়ে চার সদস্যের সংসার বেশ চলে যায়।

রজব বেপারি লালন বলেন, মানুষের খেদমত করার জন্য এক টাকার চা ও এক টাকার পান বিক্রি শুরু করি। টাকা উপার্জন করা আমার মূল উদ্দেশ্য না।
তাই কখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করি না। অনেকের কোটি কোটি টাকা আছে কিন্তু মানুষকে খাওয়ানোর মতো মন নেই। আমি গরীব হলেও আমার সাধ্যমতো মানুষকে সেবা করে চলেছি। যতোদিন বাঁচবো, ততোদিন মানুষকে এ ভাবে ভালোবেসে যাব।
nator takar moreরাজশাহীর বাঘা থেকে চা খেতে আসা যুবক রবিউল ইসলাম বলেন, অনেকের মুখে এই ১ টাকার মোড়ের কথা শুনেছি। আজ চা খেতে এসেছি। যেখানে সবাই প্রতি কাপ চা ৫ টাকা নেন। তিনি মাত্র এক টাকা নিচ্ছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্বির বাজারে কীভাবে দুই টাকায় চা-পান বিক্রি করেছেন। তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। যেখানে বাজারে বর্তমানে এক টাকার কোনো দামই নেই কিন্তু দোকান মালিক লালন ভাই এক টাকায় চা-পান বিক্রি করছেন।


বিজ্ঞাপন


লালপুর থেকে আসা রুস্তম আলী বলেন, এক টাকার মোড়ের এই রাস্তা দিয়ে তিনি প্রায়ই যাতাযাত করেন। বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই চা-পান খেয়ে যান। রুস্তম বলেন, ‘তিনি (লালন) মানুষকে ভালোবেসে নামমাত্র দুই টাকায় চা ও পান খাওয়ান।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে লালন ভাইয়ের দোকানে চলাচল। তিনি প্রতিদিন ৪-৫ কাপ চা পান করি। 

‘তার দোকানে প্রতিদিন বহু দুর থেকে মানুষ আসেন। দোকান সব সময় মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে থাকে। অনেক সময় আমরাও চা খাওয়া সুযোগ পাই না মানুষের ভিড়ে। বাহিরের অনেক মানুষ আমাদের গ্রামে আসে সেজন্য আমরা অনেক খুশি।’
nator takar moreচা খেতে আসা কামারপাড়ার এলাকার পিয়াল খান বলেন, দুই বছর ধরে লালন ভাইয়ের দোকানে চা খেতে খাই। মাঝে মাঝে বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে চলে আসি চা-পান খেতে। বাংলাদেশের কোথাও এখন এক টাকায় চা-পান বিক্রি হয় না। শুধু লালন ভাইয়ের দোকানে পাওয়া যায়। লালন ভাই মানুষকে ভালোবেসে কমে চা-পান খাওয়ান।

পাঁচ নম্বর ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম লেলিন ঢাকা মেইলকে বলেন, লালন দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে নওপাড়া মোড়ে এক টাকায় এক কাপ চা ও এক টাকায় একটি পান বিক্রি করে। এখন সবকিছুর দাম অনেক বেশি তবুও সে আগের দামেই চা-পান বিক্রি করছে। আমরা দাম বাড়ানোর জন্য বলেছি, তবুও সে আগের দামে মানুষকে খাওয়াতে চায়। এটাই তার তৃপ্তি বলে জানান। বর্তমানে ওই মোড়কে এক টাকার মোড় নামেই সবাই চেনেন। 

চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লালনকে সকল প্রকার সহযোগিতা করবেন বলেও আশ্বাস দেন।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর