বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মিনা খালার কালাই রুটির স্বাদই আলাদা

আবু সাঈদ রনি
প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২২, ০৩:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মিনা খালার কালাই রুটির স্বাদই আলাদা

রাজশাহী নগরীতে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কালাই রুটি বিক্রি করেন মিনা বেগম (৬৫)। এক সময় স্বামীর সহযোগিতায় ব্যবসার কাজ করলেও বর্তমানে একাই সামলাতে হচ্ছে যাবতীয় কাজ। পদ্মা নদী সংলগ্ন নগরীর শিমলা পার্কের প্রবেশদ্বারেই তার দোকান। চেয়ার-টেবিল দিয়ে আলিশানভাবে সাজানো কোনো দোকান নয় এটি। সামান্য ছাউনির নিচে টুল কিংবা বেঞ্চে বসেই খেতে হয় ক্রেতাদের। 

দোকানের এক পাশে নিজেই রুটি বানানো থেকে শুরু করে বেগুন ভর্তা, মরিচ ভর্তা তৈরির সমস্ত কাজ করেন তিনি। নেই কোনো সহযোগীও। তবুও এক সঙ্গে প্রায় ১৫ জনের মতো ক্রেতা সামলাচ্ছেন তিনি। 


বিজ্ঞাপন


মাষ কালাই ডাল ও আতপ চালের আটা বা ময়দা, লবণ এবং পানি দিয়ে ‍বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এই রুটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী খাবার কালাই রুটি রাজশাহী নগরীতেও জনপ্রিয়। এমনকি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এখন এর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়েছে।
kalai rutiশনিবার (২৩ জুলাই) ঘড়ির কাঁটায় দুপুর পেরিয়ে সময় তখন ঠেকেছে দেড়টার ঘরে। সরেজমিনে দেখা যায়, কাঠ ফাঁটা রোদে ক্লান্ত শরীরকে একটু জিইয়ে নিতে শিমলা পার্কের গেটে এসে থেমেছেন অনেক রিকশা চালক। গাছের ছায়ায় বসে পদ্মার হিম শীতল বাতাসে বিশ্রাম নিচ্ছেন নানা শ্রেণির মানুষ। স্বস্তির খোঁজে আসা মানুষেরা ভীড় জমান মিনা বেগমের খুপরিতে। কালাই রুটির সঙ্গে খাওয়ার জন্য অন্যতম পদ হাঁস কিংবা গরুর মাংস না থাকলেও প্রাকৃতিক বাতাসে বসে রুটি খান অনেকেই। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় শ্রমিক বা দিনমজুর শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি থাকে অনেক বেশি। 

আরও পড়ুন: জামালপুরের মাটিতে ইতিহাসের পাঠশালা

নগরীর সিএন্ডবি মোড় থেকে সার্কিট হাউসের সামনে দিয়ে এগোলে পদ্মা নদী সংলগ্ন প্রথম খুপরি দোকানটিই মিনা বেগমের। একই ক্রেতা সামলানো এবং রুটি বানানোয় ব্যস্ত মিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। জানালেন, প্রায় ২৮ বছর ধরে রুটি বিক্রি করেন তিনি। এর আগেও নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী দোকান ছিল তার। স্বামীসহ থাকেন নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায়। 

কিডনিসহ নানাবিধ রোগে অসুস্থ স্বামী হাসিবুল ইসলাম বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। প্রায় দুই বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। রুটি বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চলে। স্বামীর চিকিৎসার খরচও যোগাতে হয় এই অর্থ দিয়েই। চার ছেলে সন্তান থাকলেও মেয়ে নেই মিনা বেগমের। বিয়ের পরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন তারা। নিয়মিত খোঁজ খবর না নিলেও সন্তানদের মুখে হাসি দেখতে চান মিনা বেগম। 
kalai ruti
 বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০০ টির মতো রুটি বিক্রি হয়। মাষ কালাইয়ের দাম বেশি হওয়ায় বাড়াতে হয়েছে রুটির দাম। এছাড়া বেগুন মরিচের দামও রয়েছে ওঠা-নামার মধ্যে। তাই প্রতিটি রুটি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করি। আর প্রতি বাটি বেগুন ভর্তা বিক্রি করি ১০ টাকায়। বিনামূল্যে পেয়াজ-মরিচের ভর্তা দেওয়া হয়। 

রুটি খেতে আসা রিকশা চালক মোবারক হোসেনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি জানান, সবকিছুর দামই তো বাড়তেছে। তবুও খেয়ে বাঁচতে হবে। সেজন্য এখানে আসা। অল্প খরচে পেট ভরে খাওয়া যায়। মিনা খালার রুটির স্বাদও অন্যদের তুলনায় আলাদা বলে জানান তিনি। 


বিজ্ঞাপন


প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর