খুলনার কয়রায় জমিসংক্রান্ত বিরোধে এক নারীকে বিবস্ত্র করে গাছে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এর আগে, ১১ জুলাই (সোমবার) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
নির্যাতনের শিকার ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই নারী এখনো ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না।
শুক্রবার সকালে হাসপাতালে তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন ওই গৃহবধূ। তিনি বলেন, আমার বাবার জমি নিয়ে চাচাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে চাচারা বিভিন্ন সময় বাবার জমি দখল করতে আসে। তিন বছর আগে থেকে খুলনার আদালতে এই জমি নিয়ে একটি মামলা চলছে।
তিনি আরো বলেন, এরপরও তারা আমাদের সম্পত্তি দখলের জন্য পাঁয়তারা করছে। বারবার বাবার জমিতে ঘর বানাতে চাচ্ছে। তাদের সঙ্গে না পেরে, ঈদের বিকেলে থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ করি আমরা।
বিজ্ঞাপন
ওই নারী বলেন, ঈদের পরদিন ১১ জুলাই সকালে আমার চাচা ও চাচাতো ভাই সাইফুল, সোয়েব, সালাহ উদ্দীন ও ফিরোজসহ কয়েকজন মিলে আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় রাস্তার ওপর। তারা আমাকে একাধারে মারধর করতে থাকে, তখন আমার শরীরের কাপড় খুলে যায়। এরপর তারা আমাকে রাস্তার পাশে একটি মেহগনি গাছে বেঁধে আবারও মারধর করে। তারা আমাকে কামড়ে দাগ বসিয়ে দেয়। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
ওই নারীর বোনের স্বামী বলেন, বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে তারা গাছে বেঁধে রেখে আমার শ্বশুরের জমিতে ঘর তৈরি করছিল। তখন ঘটনাটি জানতে পেরে আমি ৯৯৯-এ ফোন দিই। পরে কয়রা থানার এসআই মাসুদের নেতৃত্বে দুই গাড়ি পুলিশ এসে গাছ থেকে দড়ি খুলে তাকে মুক্ত করে।
নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বলেন, ঘটনার সময়ে আমি সাতক্ষীরার প্রতাপ নগরে ছিলাম। মোবাইলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন আমার চাচা শ্বশুররা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশকে ম্যানেজ করে সব মীমাংসা করার চেষ্টা করছে।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন তাদের বিরোধ চলে আসছে। বেশ কয়েকবার সালিস করা হলেও সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ যায় না। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সংবাদ পেয়ে আমি পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ ভালো বলতে পারবে।
কয়রা থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. ইব্রাহিম আলী বলেন, ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। ওই নারীর বাবাকে মুঠোফোনে কল করে থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি থানায় আসেননি। যেহেতু এটা অপরাধ, তাই এ ব্যাপারে থানায় বসে মীমাংসা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অভিযোগ পেলে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এইচই