চাঁপাইনবাবগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী ও নোটারি পাবলিক হামিদুর রহমানকে এক গৃহবধূর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেছে স্থানীয়রা। এসময় অ্যাড. হামিদুর রহমান ও ওই নারীকে বেধড়ক মারধর করে ঘরবন্দি করে রাখে স্থানীয় জনতা। এমনকি ওই নারীর বাড়ির দরজা ভাঙচুরের চেষ্টা করে এবং বাড়িতে ইটপাটকেল ও পাথর ছুঁড়ে মারে উত্তেজিত জনতা।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পারকালিনগর হুড়কাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
আটককৃত হামিদুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী ও জেলা শহরের পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা। পারকালিনগর হুড়কাপাড়া এলাকার মৃত দারেস আলী মণ্ডলের মেয়ে সাবিরন বেগমের (৩৮) বাড়িতে তাকে আটক করে স্থানীয়রা। শনিবার সন্ধ্যায় আটক করে মারধর ও আটকে রাখার পর স্থানীয়রা কাজী ডেকে বিয়ের আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই আইনজীবীকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও আটককৃত গৃহবধূর স্বজন সূত্রে জানা যায়, সাবিরন বেগমের স্বামী বিদেশে থাকে, সে বাড়িতে একায় বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরেই এই বাড়িতে যাতায়াত ছিল আইনজীবী হামিদুর রহমানের। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাড়িতে প্রবেশ করে ওই আইনজীবী। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাড়ি বের না হওয়ায় সন্দেহ হলে জানালা দিকে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদেরকে অনৈতিক ও আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় লোকজন ডেকে বাড়িতে গেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আইনজীবী হামিদুর রহমান। এসময় তাকে আটক করা হয়।
![]()
আইনজীবী হামিদুর রহমানকে আটকের পর তাকেসহ ওই নারীকে বেধড়ক মারধর করে ও ঘরে আটকে রাখে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা৷ এমনকি ডাকা হয় কাজীকেও। এসময় রাত পৌনে ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পালিয়ে যায় স্থানীয়রা। পরে ওই আইনজীবীকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এসময় সেনাবাহিনী সদস্যদের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করেন আইনজীবী হামিদুর রহমান। এমনকি দুজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ দেন সাবিরন বেগম।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় যুবক বাবু, আব্দুল আলিম, তরিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই লোকের যাতায়াত ছিল এই বাসায়। আমরা সন্ধ্যার দিকে জানালার পাশে থাকা ফুটা দিয়ে তাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় সাবিরনের বিছানায় দেখতে পায়। আরও লোকজন নিয়ে বাড়িতে গেলে সাবিরন ওই উকিলকে তার ভাই পরিচয় দেয়। এমনকি তাৎক্ষণিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। এর অন্য কোনো সুরাহা না পেয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কাজী ডেকে বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
এ বিষয়ে সাবিরন বেগমের বড় বোন রমিসা বেগম বলেন, উকিল হামিদুর রহমান মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করতো বোনের বাসায়। সন্ধ্যার দিকে আটক করে স্থানীয়রা মারধর করে ও বিয়ের আয়োজন করে। তবে হামিদুর রহমান সাবিরন বেগমের কেমন ভাই বা আত্মীয় তা বলতে পারেননি তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজী ইসারুল ইসলাম জানান, বিয়ে দিতে হবে এমন খবর পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু যাওয়ার পর জানতে পারি, মেয়ের ওই নারীর স্বামী আছে। বিষয়টি জানার পর বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়৷ কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে আইন পরিপন্থি কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরমধ্যে সেনাবাহিনী আসলে আটককারীরা পালিয়ে যায় এবং ওই ব্যক্তি ও নারী ছাড়া পায়।

অ্যাড. হামিদুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. ইসাহাক আলী জানান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত রয়েছেন। তবে তার ব্যক্তিগত জীবনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না তা আমার জানা নেই। অ্যাড. হামিদুর রহমান জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেও জানান তিনি।
এনিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি আইনজীবী হামিদুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম জানান, এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

