একসময় গ্রামের এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে ছুটে বেড়াতেন রাকিব। পরিশ্রমই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। অদম্য পরিশ্রমী মানুষটি আজ শয্যাশায়ী। একটি ভ্যান গাড়ি আর জরাজীর্ণ ঘরের মধ্যে ছোট চৌকিতে শুয়ে থাকার মধ্যেই তার জীবন সীমাবদ্ধ।
পরিবারের ভরসা রাকিব এখন প্রতিদিন লড়াই করছে বেঁচে থাকার জন্য। একটি দুর্ঘটনায় থমকে গেছে তার স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ও সুন্দর সংসার। এখন তার চোখে অসহায়ত্বের ছাপ আর মুখে নীরব কষ্ট। পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে তার দিন কাটছে সীমাহীন যন্ত্রণায়। তবুও বাঁচার আকুতি নিয়ে খুঁজছেন একটু সহানুভূতি ও সহযোগিতা।
বিজ্ঞাপন
রাকিব ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের চর যতিন গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়ার একমাত্র ছেলে। সে পেশায় একজন নছিমন চালক ও অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে নিজের নছিমন গাড়ি নিয়ে প্রতিদিনের মতো কাজে বের হয়েছিলেন তিনি। এরপর নসিমন গাড়িতে ভারী গাছ তুলে বাঁধার সময় হঠাৎ হাত ফসকে দড়ি ছিঁড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে বিশাল একটি গাছ আছড়ে পড়ে তার পিঠে। ভেঙে যায় মেরুদণ্ড। অচল হয়ে যায় শরীরের নিচের অংশ। থেমে যায় রাকিবের দৌড়ঝাঁপ করা জীবন। চিরদিনের মতো হয়ে যান পঙ্গু।
দুর্ঘটনার তিন বছর পার হলেও এখনও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে মানবেতর জীবন কাটছে তার। উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার। খাবার, চিকিৎসা আর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিদিনের অনিশ্চয়তা তাকে ভেঙে দিচ্ছে। ছোট ছোট সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে সহ্য করছেন কষ্ট, লড়ছেন বেঁচে থাকার জন্য। সমাজের সহানুভূতি আর সহযোগিতা পেলে হয়ত এই দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারতেন, ফিরতে পারতেন স্বাভাবিক জীবনের পথেও।
বিজ্ঞাপন
![]()
রাকিবের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তার চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যয় করে পরিবার এখন নিঃস্ব। বর্তমানে চিকিৎসা তো দূরের কথা দু'বেলা দুমুঠো খাবারের জন্য চাইতে হয় গ্রামবাসীর সহযোগিতা। পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে দিন দিন রাকিবের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। রাকিবের বেঁচে থাকা ও স্ত্রী সন্তানের মুখে দু'বেলা খাবারে জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
প্রতিবেশীরা জানান, রাকিব খুবই পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। পরিশ্রম করা আয় রোজগার দিয়ে খুব সুখের সংসার ছিল তার। কিন্তু, হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় তাদের সংসারে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। এখন তাদের দু'বেলা দুমুঠো খাবারের জন্য প্রতিদিনই যুদ্ধ করতে হয়। তাই দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তার পরিবার।
এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু মুসা বলেন, দুর্ঘটনার শিকার রাকিবের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার কাছে আবেদন করা হলে আমি তাদেরকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করব।

রাকিব একসময় অন্যের বোঝা টানতেন, আজ তিনিই হয়ে উঠেছেন নিজের কাছেই নিজের বোঝা। তাই সরকার ও দেশের সব মানবিক মানুষদেরকে রাকিব ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন স্বজন ও গ্রামবাসী। অসহায় রাকিবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অথবা তাকে সহযোগিতা করতে চাইলে ফোন করুন: ০১৭৫৪৬৪৫২৮৩ (উক্ত নম্বরে নগদ/বিকাশ খোলা আছে)।
ছবি: দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মনপুরার রাকিব হোসেন।
প্রতিনিধি/এসএস

