আফ্রিকার দেশ সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় শহীদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বীর সৈনিক শামীম রেজার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, দুপুর পৌনে ২টার দিকে শহীদ সৈনিক শামীমের মরদেহবাহী হেলিকপ্টারটি কালুখালী মিনি স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। সেখানে থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল মরদেহটি লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গি গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়।
সেখানে স্বজন ও এলাকাবাসীর দেখার জন্য প্রায় আধাঘণ্টা মরদেহটি রাখা হয়। এরপর বাড়ির কাছে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে জানাজা নামাজ শেষে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।
৩ ভাই এক বোনের মধ্যে শামীম সবার বড়। মেজ ভাই সোহেল ফকির সৌদি আরব প্রবাসী, সেজ ভাই সোহান বেকার অবস্থায় বাড়িতেই রয়েছেন এবং একমাত্র বোন মরিয়ম খাতুন হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করেন।
শামীমের বাবা আলম ফকির জানান, তিনি কৃষিকাজ করে শামীমকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন শামীম। গত ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান।
বিজ্ঞাপন
আলম ফকির বলেন, সবশেষ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আমার ছেলের সাথে আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয়। সেসময় ছেলে জানায়, সে সুস্থ আছে। বললো, আব্বু আমি ডিউটিতে যাবো দোয়া কর। কিন্তু ডিউটিতে গিয়ে আর ফিরল না আমার ছেলেটা। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই আমার ছেলে আর নেই।
তিনি বলেন, আমার ছেলে শামীম দেড় বছর আগে কুষ্টিয়ার খোকসায় বিয়ে করে। শামীমের স্বপ্ন ছিল ছোট ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিবে। সে আমার মেঝ ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছে। ছোট ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করেছে। মিশন থেকে ফেরার সময় একমাত্র বোনের জন্য সোনার গহনা নিয়ে আসতে চেয়েছিল সে। সব স্বপ্নই এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ্ যেন আমার ছেলেকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক ড্রোন হামলার চালায়। এসময় দায়িত্বে থাকা ছয়জন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী নিহত হন।
এছাড়া ওই ড্রোন হামলায় আহত হন নয় শান্তিরক্ষী। তাদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (লেভেল ৩ হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। বাকিরা শঙ্কামুক্ত এবং একজন এরই মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিনিধি/এসএস

