সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিজয় দিবস ও বছরের শেষ ছুটি ঘিরে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের ঢল

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার 
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিজয় দিবস ও বছরের শেষ ছুটি ঘিরে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক ঢল

বিজয় দিবস এবং বছরের শেষের সরকারি ছুটি উপলক্ষে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকের চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী জাহাজগুলোর প্রায় সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। সরকারের নির্ধারিত দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার যাত্রী পরিবহনের সীমা অনুযায়ী বিক্রি হওয়া টিকিটগুলো মিলিয়ে এই সময়ে দ্বীপটিতে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত নয়, আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্তও অর্ধেক টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


চলতি মৌসুমে গত ১ ডিসেম্বর থেকে নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। সরকারি ট্রাভেল পাস ব্যবস্থার আওতায় পরিচালিত এই যাত্রায় প্রতিদিন নির্ধারিত সংখ্যক পর্যটকই দ্বীপে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন।

ট্রাভেল পাস সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যাত্রা শুরুর প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পাস ইস্যু করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। ওই দিন দুই হাজার পাসের বিপরীতে ইস্যু করা হয় ১ হাজার ৮৭১টি পাস। ছয়টি জাহাজে করে সেদিন সেন্ট মার্টিন যান ১ হাজার ৮৫৬ জন পর্যটক।

সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘শুরুর দিকে যাত্রী সংখ্যা কম থাকলেও সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই পর্যটকের চাপ বেড়ে যায়। ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় ওই সময়েও ভ্রমণের চাপ থাকবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নভেম্বর মাসে রাতযাপনের অনুমতি না থাকায় পর্যটকদের আগ্রহ কম ছিল। তবে এখন ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাতযাপনের সুযোগ থাকায় প্রতিদিন অনুমোদিত ছয়টি জাহাজ নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহন করছে।’


বিজ্ঞাপন


এদিকে, সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়মিত তদারকি চালাচ্ছে। তবে কঠোর নজরদারির মধ্যেও গত দুই সপ্তাহে কয়েকটি অনিয়ম ও টিকিট জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।

যাত্রা শুরুর প্রথম দিন ১ ডিসেম্বর ট্রাভেল পাস ছাড়া টিকিট বিক্রির দায়ে ‘কেয়ারি সিন্দাবাদ’ নামের একটি জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ৩ ডিসেম্বর নুনিয়ারছড়া ঘাটে নকল কিউআর কোড সংবলিত টিকিট শনাক্ত করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। একই টিকিটে একাধিক যাত্রী ভ্রমণের চেষ্টা করলে বিষয়টি ধরা পড়ে।

সবশেষ ১১ ডিসেম্বর একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হন মানিকগঞ্জ থেকে আসা ৪৪ জন পর্যটক। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এজেন্সিকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বিক সহায়তা করছে। যেকোনো ধরনের জালিয়াতি বা অনিয়মের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘প্রতিদিন ভোর থেকেই ঘাট এলাকায় তদারকি করা হচ্ছে। নির্ধারিত সীমার বাইরে কোনো পর্যটক পরিবহন করা যাবে না। নিয়ম ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

lk

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। পরে ২০২৩ সালে দ্বীপ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের অক্টোবরে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়, যা বর্তমানে কঠোরভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর