লিফটের বাটনে ঝুলে আছে নড়াইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। দীর্ঘ ৮ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে হাসপালটির উন্নত সেবার আশা দিন দিন নিরাশায় রূপ নিচ্ছে। বর্তমানে জেলার ১০০ শয্যার হাসপাতালটি গড়ে প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুন রোগীর সেবা দিচ্ছে। অথচ পাশেই দাঁড়িয়ে আছে নতুন ঝকঝকে সুউচ্চ ৯ তলা ভবনটি। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ভবন হস্তান্তর আর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে জানা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। তবে দ্রুত হস্তান্তরের আশার বানী গণপূর্তের।
![]()
বিজ্ঞাপন
জেলা গণপূর্ত বিভাগের তথ্য বলছে, গত ২০১৭ সালে নড়াইলে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মূল ভবন, সার্ভিস ভবন ও চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি ভবন নির্মাণে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের জুন মাসে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ৮ তলা ভবনসহ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করে। যার প্রস্তাবিত মূল্য ধরা হয় ৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯ম তলায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ নির্মাণের কাজে প্রস্তাবিত মূল্য ধরা হয় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের জুনে কাজের মেয়াদ শেষে হস্তান্তরের কথা থাকলেও নকশা জটিলতায় লিফটের বাটনে ঝুলে আছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
![]()
সরেজমিনে হাসপালটিতে দেখা যায়, সিড়ি তলা থেকে বারান্দা (করিডোর) কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা টুকুও ফাঁকা নেই। রোগী আর স্বজনদের এমন ভিড়ের দৃশ্য যেন নিত্যদিনের চিত্র নড়াইল জেলা শহরের একমাত্র ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতলটির। গড়ে প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ রোগীর চাপ সামলাতে নাজেহাল অবস্থা হাসপাতলটির।
![]()
বিজ্ঞাপন
হাসপাতলটিতে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালটির ফ্লোর, করিডোর, সিঁড়ির তলায় মাদুর আর চাদর মেলে রোগী নিয়ে অবস্থান করছেন অন্তত ২৫০ রোগীর স্বজনরা। একদিকে, শীতের প্রকোপ অন্যদিকে রোগ সংক্রমনের শঙ্কা নিয়ে অনেকটা নিরুপায় হয়েই একটু উন্নত চিকিৎসার আশায় মানবেতরভাবে হাসপাতালে অবস্থান করছেন তারা।
তবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অস্ত্রোপচারের সকল সুবিধা না থাকাসহ হাসপাতালটির নাজেহাল অবস্থায় এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সদর হাসপাতাল ছেড়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেলসহ ঢাকায় রোগী স্থানান্তর করতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। তাই আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বাস্তবায়ন চান সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
![]()
নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, সীমিত জনবলসহ নানাবিধ সংকটের মাঝে ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ রোগীর সেবা দিচ্ছে নড়াইল সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এটি একটি বহুমুখী হাসপাতাল। রোগী রাখার স্থান চতুর্থ তলার উপরে। যে কারণে লিফটের কাজ সম্পন্ন না করে কোনোভাবে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, লিফটের সমস্যা সমাধান করে কবে নাগাদ হস্তান্তর করবেন, সেটা গণপূর্তই বলতে পারবেন। তবে হস্তান্তরের পর কতদিন নাগাদ সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ভবন প্রস্তুত হলে, লোকবল নিয়োগসহ আনুষাঙ্গিক অনেক বিষয় বাকি থেকে যায়। মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতায় সেটা হস্তান্তর পরবর্তী আর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে চালু হতে পারে।
নড়াইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মু. সারোয়ার হোসেইন বলেন, লিফটের কাজ শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের আছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি হস্তান্তর করা এখনও সম্ভব হয়নি। ১২৫০ কেজির চারটি লিফট (প্যাসেনঞ্জার কাম বেড লিফট) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে অনুমোদন সাপেক্ষে লিফটের কাজ শেষ করে আমরা হস্তান্তর করতে পারবো।
প্রতিনিধি/টিবি

