বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মাদারীপুরে জেলাজুড়ে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

জেলা প্রতিনিধি, মাদারীপুর
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

মাদারীপুরে জেলাজুড়ে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

মাদারীপুরে এখন আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই বেড়েছে এদের আধিপত্য। প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আইনের যথাযত প্রয়োগ না করায় দিনে দিনে কিশোর গ্যাং-এর সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে মত বিশেজ্ঞদের। পুলিশের একার পক্ষে এমন অপরাধ দমন করা সম্ভব নয় জানিয়েছে কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিরোধ প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন।

সম্প্রতি কিশোর গ্যাং-এর হামলার শিকার হন বাউল শিল্পী সজল বেপারী। পরে তাকে ভর্তি করা হয় মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে। শহরের পানিছত্র এলাকায় তার ওপর হামলা চালায় কিশোর গ্যাং-এর সদস্যরা। হাত-পাসহ একাধিক জায়গায় কুপিয়ে জখম করা হয়।


বিজ্ঞাপন


শুধু এই বাউল শিল্পীই নয়, এমন বহু হামলা আর সংঘর্ষের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইলে ধারণকরা ভিডিও প্রতিনিয়তই ঘুরে বেড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জেলা শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও বেড়েছে এই কিশোর গ্যাং-এর দৌড়াত্ম। আধিপত্য বিস্তার আর রাজনৈতিক সুবিধার আড়ালে দিনের পর দিন ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ১২-১৬ বছর বয়সী একাধিক কিশোর।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের বাদামতলা, ইউআই স্কুল রোড, আমিরাবাদ, বটতলা, কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালাচ্ছে তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। বার বার হামলা আর সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের হচ্ছে না। এতে মূল অভিযুক্তরা হয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইন বিশেজ্ঞরা বলছেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ করা হলে, অচিরেই নির্মূল করা সম্ভব এই কিশোর গ্যাং।

পরিসংখ্যান বলছে, গেল এক বছরে কিশোর গ্যাং-এর হামলা আর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩০টি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হাতেগোনা কয়েকজনকে আটকের পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ায় আরও বেপরোয় হয়ে উঠছে এই গ্যাং-এর সদস্যরা।

ইউআই স্কুলের সামনের কনফেকশনারি ব্যবসায়ী ইফতেখারুর রহমান লিটন বলেন, কলেজ রোড আর আমিরাবাদ এলাকার কিশোর গ্যাং- এর সদস্যরা মাঝে মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ শুরু হলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালায়। কয়েকবার আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পুলিশ আসে সংঘর্ষ হওয়ার পরে।


বিজ্ঞাপন


বাদামতলা এলাকার মোবাইল ব্যবসায়ী মো. নাসির হোসেন বলেন, ১৫-১৬ বছর বয়সী ছেলেরা হামলা আর সংঘর্ষ চালিয়েই যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। দেশিয় বিভিন্ন রকমের অস্ত্র নিয়ে তারা হামলা চালায়। পরে ভয়ে দোকান বন্ধ করে ভেতরে থাকতে হয়। আমরা স্থায়ীভাবে এর প্রতিকার চাই।

বাউল শিল্পী সজল বেপারী বলেন, ব্যক্তিগত কাজ শেষে সড়কে দাঁড়াতেই কয়েকজন কিশোর দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে তারা। আমি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেই। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বয়স ১৩-১৬ বছরের মধ্যে।

 

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন আরমিন মোল্লা বলেন, আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। এই কিশোর গ্যাং খুব সহজেই নির্মূল করা যায়। কিন্তু বার বার হামলা আর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে মামলা হয় না, আইনের যথাযথ প্রয়োগও করা হয় না। যদি মামলা করে কিশোরদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হতো তাহলে কিশোর গ্যাং নামের শব্দ আস্তে আস্তে বিদায় নিতো। সবার প্রত্যাশা এই অপরাধ কমাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হোক।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায়ই কিশোর গ্যাং-এর দুটিপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এটা মাদারীপুর জেলার ঐতিহ্য হয়ে গেছে। পুলিশকে প্রায়ই সময় কিশোর গ্যাং-এর মারামারি থামাতে ব্যস্ত থাকতে হয়। মূলত হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা কোনপক্ষ মামলা করতে চায় না। তাই সহজে চাইলেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। এই অপরাধ থামাতে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প কিছু নেই। আর রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর