রংপুরের গঙ্গাচড়ার একটি মাদরাসায় ১৯ শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদরাসার সহকারী শিক্ষক হাফেজ সাজেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগে শুক্রবার রাতে অভিভাবকসহ বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন তাকে মারপিটসহ অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে এ ঘটনায় এক অভিভাবক গঙ্গাচড়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চর ইশোরকোল (আশ্রয়ণ) আহমাদিয়া নূরুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসায়।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ বোধ করাসহ ভয়ে মাদরাসায় যাচ্ছিল না যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ৩য় শ্রেণির এক মেয়ে শিশু শিক্ষার্থী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে শিক্ষক সাজেদুলের যৌন নিপীড়নের ঘৃণিত কাহিনি। গত দু’মাসে ১৯ জন শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করেন সহকারী শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম। বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলেন ওই শিক্ষক।
নিপীড়নের শিকার ৩য় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের ক্লাসে ১৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে রয়েছে ৫ জন। তাদের সবাইকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের পর সবাইকে মারধরের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
![]()
অসুস্থ শিক্ষার্থীর দাদি জানান, সবগুলো মেয়ে শিক্ষার্থীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় অকপটে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অভিভাবক শহিদুল ইসলাম, মোকছেদুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার বলেন, লম্পট ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই আমরা।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, ২০০৩ সালে স্থাপিত মাদরাসাটিতে বর্তমানে হেফজ শাখায় ২৫ জন শিক্ষার্থী (বালক) আবাসিক থাকে। এছাড়া নার্সারি থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত ৮০ জন শিক্ষার্থী (ছেলে-মেয়ে) পড়াশোনা করে। মাদরাসায় অবস্থান করা সহকারী শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম কক্ষ ঝাড়ু দেওয়াসহ নানা কৌশলে ডেকে একেকদিন একেক মেয়ে শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করেন। তার হুমকির ভয়ে এতদিন শিশুরা মুখ খোলেনি। বৃহস্পতিবার বিষয়টি প্রকাশ পেলে ক্ষুব্ধ হন অভিভাবকরা। বিষয়টি টের পেয়ে ওইদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই শিক্ষক পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রামে তার বাড়িতে যান এবং শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে আসলে উত্তেজিত স্থানীয়রা তাকে মাদ্রাসার কক্ষে অবরুদ্ধ করে মারপিট করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। শনিবার দুপুরে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯ শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় মামলা করেছেন।
এ বিষয় মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন, এতদিন এ বিষয়ে কিছু জানলাম না, শুনলাম না, হঠাৎ করে ১৯ শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের খবরে হতবাক হয়েছি। তবে বিষয়টি সঠিক হলে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
মাদরাসার সভাপতি ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বল্প বেতন আর স্থানীয়দের চাঁদায় মাদরাসাটি পরিচালিত হয়। এতদিন ভালোই চলছিল। মামলা হয়েছে, আইনের মাধ্যমেই অপরাধীর বিচার হোক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গঙ্গাচড়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ সরকার জানান, ১৯ শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা হয়েছে। উদ্ধার করে আনা অভিযুক্ত শিক্ষককে বিকেলে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস

