সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রংপুর-৪ আসন: ভরসায় ‘ভরসা’ বিএনপির, দৌড়ে পিছিয়ে নেই এনসিপি-জামায়াত

রেজাউল করিম জীবন, রংপুর
প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

রংপুর-৪ আসন: ভরসায় ‘ভরসা’ বিএনপির, দৌড়ে পিছিয়ে নেই এনসিপি-জামায়াত

রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনটি এখন বেশি আলোচনায়। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, জাতীয় পার্টি ৪ বার এবং বিএনপি মাত্র ১ বার জয় পেয়েছিল। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অবর্তমানে বিজয়ের ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী। এই আসনটিতে এবার প্রয়াত শিল্পপতি ও সাবেক এমপি রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসাকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। হারানো আসন পুনরুদ্ধারে ভরসাই বিএনপির ভরসা। কিন্তু এই আসনে এবার এনসিপির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এছাড়া জামায়াতের প্রার্থী আছেন দলটির রংপুর মহানগরের আমির মাওলানা এটিএম আজম খান।

রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনটিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। গত ৫ জুলাই নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। গত ১ জুলাই রংপুরের কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আর ৩ নভেম্বর বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর এই আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনি আমেজ। তবে জাতীয় পার্টি মাঠে না থাকলেও প্রার্থী হিসেবে পীরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মাহবুবার রহমান পোস্টারে জানান দিচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতার। বড় দুই দলের প্রার্থীরা প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নির্বাচনি শোডাউন, মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এনসিপির প্রার্থী আখতার হোসেনও ইতোমধ্যে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন। উঠান বৈঠক ও জনসংযোগসহ উন্নয়নমূলক কাজ করছেন।


বিজ্ঞাপন


rangpur_vote_photo_1

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে এমপি ছিলেন মুজিবুর রহমান। এরপর বাকি নির্বাচনগুলোতে এখানেও কেউই দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সমাজের জন্য নিবেদিত ছিলেন রহিম উদ্দিন ভরসা ও তার ছোট ভাই জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা। দুজনই এমপি হয়ে কথা বলেছেন এলাকার মানুষের জন্য। তাদেরকে বলা হতো ‘গরিবের ভরসা’। সেই ভরসা পরিবার থেকে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা। তিনি ২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ আসন থেকে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। রাতের ভোট খ্যাত সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টিপু মুনশির (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী) কাছে পরাজিত হলেও তিনি পেয়েছিলেন লক্ষাধিক ভোট। কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে থাকা এই ভরসাকে ঘিরে এবার হারানো আসনটি উদ্ধারে সুবর্ণ সুযোগ দেখছেন দলের বিএনপির নেতাকর্মীরা।

thumbnail_rangpur_vote_photo_3

এমদাদুল হক ভরসা বলেন, আমার বাবা-চাচা যখন এমপি ছিলেন, তারা যা করে গেছেন, তা মানুষ ভুলে যায়নি। আমিও এলাকার মানুষের জন্য তেমন কিছু করতে চাই, যা মানুষ এখন দেখতে চায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি। প্রতিবছর শীতার্তদের ২৫ হাজার কম্বল, ঈদে ৩০-৪০ হাজার শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করছি। ঝরে পড়া রোধে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ছাড়াও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করছি। এসব কাজ ভোটের আশায় নয়, এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমরা মানুষের জন্য ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। নির্বাচিত হলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা রাখাসহ এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কলকারখানা স্থাপন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে কাজ করব। বাবার মতো জনগণের আস্থা অর্জন করে পিছিয়ে পড়া রংপুরকে এগিয়ে নিতে চাই। এবার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় বাবার আসন পুনরুদ্ধারের সঙ্গে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অবর্তমানে বিএনপির মতো বিজয়ের ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির প্রার্থী মাওলানা এটিএম আজম খান রাজনীতির মাঠে পরীক্ষিত নেতা। তিনি প্রতিদিনই কমবেশি উঠান বৈঠক, নির্বাচনি প্রচারণা ও সমাবেশ করছেন। তার পোস্টার, ব্যানার শোভা পাচ্ছে কাউনিয়া, পীরগাছার হাটবাজারসহ এলাকাগুলোতে।

thumbnail_rangpur_vote_photo_2

জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা এটিএম আজম খান বলেন, এমপি নির্বাচিত হলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সব বেকার যুবক ও কর্মক্ষম মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব ইনশাআল্লাহ। আমার লক্ষ্য এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নদী ভাঙন রোধ নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করা। অবহেলিত জনগণের অধিকার, বেকারত্ব দূরীকরণে বাস্তবমুখী শিক্ষা ও কর্মের ব্যবস্থা এবং শিক্ষার প্রসার ঘটানো নিশ্চিত করা। উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অনুন্নত এলাকাগুলোতে রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

আরও পড়ুন

এবারের জাতীয় নির্বাচন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে: রংপুরের পুলিশ সুপার

তিনি আরও বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়, কথা-কাজে মিল দেখতে চায়। এ কারণে জামায়াতের প্রতি সব শ্রেণি পেশার মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তারা চায় জামায়াত একবার হলেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক। আশা করছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে জামায়াতকে সমর্থন দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবে।

রংপুর-৪ আসনে এবার ভোটার বেড়েছে ৪৭ হাজার, যার অধিকাংশই তরুণ। এদের একটা বড় অংশ তরুণ নেতৃত্বের দিকে হয়ত ঝুঁকতে পারে। কাঙ্ক্ষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কেবল তরুণ সমাজের নয়, সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাবে-এমন সম্ভাবনা দেখছেন অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করা এনসিপির নেতাকর্মীরা। প্রত্যন্ত এলাকাতেও সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসন।

Untitled_design_(43)-68a307c706ae9

কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর এলাকার বাসিন্দা আখতার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ২০১৮ সালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে তিনি একা অনশন ধর্মঘট করেন, যা তাকে জাতীয়ভাবে পরিচিত করে তোলে। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন। পরে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রংপুর-৪ আসনে নির্বাচন উপলক্ষে কয়েকমাস থেকেই গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

7ec18d1b795bee1dcb11e069895ecc35-68127f4da0466

আখতার হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার থেকে রংপুর বরাবরই উন্নয়ন বঞ্চিত। এরমধ্যে রংপুর ৪ আসনের কাউনিয়া পীরগাছা উপজেলা বেশি বঞ্চিত। যেভাবে উন্নয়নের কথা প্রচার হয়েছে, সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের গভীরতর যে সমস্যাগুলো রয়েছে-অনেক ক্ষেত্রে তারা এখনো পিছিয়ে। এ মানুষদের সামনের দিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, কীভাবে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে, সেই স্বপ্নের কথাই মানুষের কাছে তুলে ধরছি। সার্বিকভাবে সব শ্রেণি পেশার মানুষের সমর্থন পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, এনসিপি নির্বাচিত হলে জনগণের কল্যাণে নতুন আইন প্রণয়ন করবে। যাতে কেউ সরকারি বরাদ্দের নয়ছয় করতে না পারে। সেই লক্ষ্যে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে মসজিদ-মন্দিরে বরাদ্দের পরিমাণ সাইনবোর্ডে প্রকাশ করা হবে। গ্রামাঞ্চলে জনসেবা কেন্দ্র স্থাপন করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর