নদীবিধৌত গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। যেখানে একসময় বন্যা, খরা আর দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। সেখানেই এখন দেখা দিচ্ছে এক নতুন দিগন্ত। ইতোমধ্যে উন্নত জাতের গাজর চাষে চরবাসীর জীবন ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেসের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) গবেষণা ব্যবস্থাপনায় গাইবান্ধার কামারজানি চরে চালু হয়েছে একটি বিশেষ পাইলট প্রকল্প।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি কামারজানি চরের কৃষক তছলিম মিয়াসহ অনেকে পতিত জমিতে এবার উচ্চফলনশীল গাজরের চাষ শুরু করেছেন।
গাইবান্ধার কামারজানির চরে এখন গড়ে উঠছে এক রঙিন কৃষি বিপ্লব। যেখানে বালুময় মাটিতে শিকড় গাড়ছে আশা, পরিশ্রম আর প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। তরুণ গবেষকদের হাত ধরে চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন গাজর চাষে দেখছেন দিনবদলের স্বপ্ন। যেখানে চরের কৃষিতে যুক্ত, গাজর চাষে জীবন বদলে দিতে পারে একজন কৃষকের। নতুন ফসলের দুয়ার উন্মোচনের মাধ্যমে কামারজানির চরে কোনো একদিন গাজর চাষ হতে পারে অপার সম্ভাবনার। যেখানে গাজরের রঙে বদলে যাবে জীবনের রঙ।
![]()
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি কীভাবে গাজর চাষের জন্য একটি জমি প্রস্তুত করা হয় তার নমুনা হিসাবে মাটি প্রস্তুত, বীজ বপন, সার প্রয়োগ, রোগ দমন ও ফসল তোলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই কৃষকদের শেখানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে গাজর চাষাবাদের এ সফল সূচনাকে কেন্দ্র করে কৃষকদের নিয়ে কামারজানি চরে এক সমাবেশ ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও তরুণ গবেষক ড. মো. হারুন অর-রশিদ।
গবেষকরা বলছেন, দেশে প্রচলিত গাজর চাষে প্রতি হেক্টরে যেখানে গড়ে ১০ থেকে ১১ টন ফলন হয়, সেখানে নবউদ্ভাবিত উন্নত জাতগুলো থেকে পাওয়া গেছে ৩০ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত ফলন। এছাড়া এ গাজরগুলো দেশের উষ্ণ ও খরাপ্রবণ অঞ্চলেও টিকে থাকে এবং ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যেই পূর্ণ ফলন দেয়। প্রতিটি গাজরের গড় ওজন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়-যা বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল আলম বলেন, চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ কমিয়ে গাজর ও অন্যান্য পুষ্টিকর ফসল চাষ করলে কৃষক স্বল্প খরচে উচ্চ মুনাফা পেতে পারে। চরবাসীর পুষ্টি চাহিদাও মিটবে।
অতিরিক্ত উপপরিচালক (ক্রপ) ও বাকৃবির পিএইচডি ফেলো মো. আবদুল আওয়াল জানান, রঙিন গাজর চাষে রোগবালাই কম দেখা যায় এবং কীটনাশক ও সার প্রয়োগও তুলনামূলকভাবে কম লাগে। পিঁপড়া ও ছোট পোকামাকড় প্রতিরোধে সামান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলেই যথেষ্ট।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও তরুণ গবেষক ড. মো. হারুন অর-রশিদ বলেন, চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে যেখানে খরচ ও ঝুঁকি বেশি, সেখানে গাজর চাষে চারগুণ পর্যন্ত মুনাফা সম্ভব। এ অঞ্চলের বালুমিশ্রিত ও পলিযুক্ত মাটি গাজরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
তিনি মনে করেন, উন্নত জাতের গাজর চাষ গাইবান্ধার চরবাসীর জীবন ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রতিনিধি/এসএস

