উত্তরাঞ্চলের কৃষি নির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও। বড় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার মানুষের জীবিকা অনেকটাই কৃষিনির্ভর। কিন্তু গত তিন থেকে চার দিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জেলার বিভিন্ন মাঠে নুয়ে পড়েছে পাকা আমন ধান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
প্রকৃতির এই বৈরী আচরণে যেন হঠাৎই থমকে গেছে কৃষকের মুখে হাসি। মাঠের সোনালি ফসল এখন মাটিতে মিশে গেছে। স্বপ্নের মতো যত্নে লালন করা ধানগাছগুলো এখন কাদায় লুটিয়ে, শীষে পানি জমে গজিয়ে উঠছে নতুন গাছ।
বিজ্ঞাপন
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ছাড়াও রানীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে ধান, কিছু এলাকায় জমে থাকা পানিতে পচতে শুরু করেছে ধানের শীষ।
কৃষকরা বলছেন, গত বছর আগাম সবজি ও আলু চাষে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তারা। এবার কিছুটা লাভের আশায় আমন চাষে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেই আশাও এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।
![]()
রানীশংকৈল উপজেলার চোপড়া গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে আমন রোপণ করেছিলাম। বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে এখন সব ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ক্ষতি হয়েছিল, এখন আবার এই বৃষ্টি। মনে হচ্ছে লোকসান ছাড়া কিছুই থাকছে না।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলার ফকদনপুর এলাকার চাষি নুরল ইসলাম জানান, আগাম জাতের লম্বা ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যাদের ধান কাটা শুরু হয়েছিল, তারাও এখন পানিতে বিপাকে। জমিতে জমে থাকা পানি দ্রুত না সরলে ধানের ক্ষতি আরও বাড়বে। ইতোমধ্যেই পড়ে থাকা ধানে গজাতে শুরু করেছে নতুন গাছ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ৩ থেকে ৪ দিনে ঠাকুরগাঁও জেলায় ২২.৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এতে বৃষ্টিতে ৭৯৮ হেক্টর আমন ধান খেত ও সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হেক্টর।
![]()
এবার জেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি রোপণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আলমগীর কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল ও অতিনিম্ন জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, পড়ে থাকা ধানগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে এবং জমিতে জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন করতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
![]()
তিনি আরও বলেন, পুরোপুরিভাবে এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে মাঠে কাজ করছেন আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে এবং দ্রুত রোদ উঠলে ধান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তবে আজকের কিছুটা রোদ উজ্জ্বল আবহাওয়া আছে। আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা কম হবে।
![]()
কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটিতে পড়ে থাকা ধান বেশিদিন পানিতে ডুবে থাকলে শীষে অঙ্কুরোদ্গম হয়। ফলে ফলন ও গুণমান—দু’টোই মারাত্মকভাবে কমে যায়। এতে বাজারে ধানের দামও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় বাজারগুলোতেও ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ আগাম ফসল কাটার চিন্তা করছেন, কেউ আবার অপেক্ষা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে ফেরার।
![]()
টানা বৃষ্টিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারও একর আমন ধান। সেই সঙ্গে লুটিয়ে পড়েছে কৃষকের বছরের পর বছর পরিশ্রমের ফল আর স্বপ্ন।
এখন তারা তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে — যদি আবার রোদ ওঠে, তাহলে হয়ত আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এ জেলার পরিশ্রমী কৃষকরা।
প্রতিনিধি/এসএস

