এক পাশে নদী, অন্য পাশে সাদা বকের সারির মতো যেন পালক ফুলিয়ে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। এ যেন যমুনা নদীর পাড়ে সবুজের ভেতর অনেকটা জায়গাজুড়ে সাদার মেলা বসিয়েছে কাশফুল। শরৎকাল এলেই সিরাজগঞ্জ শহরের চর-মালশাপাড়া (কাটাওয়াবদা) ক্রসবার-৩ এলাকায় কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় জমে। সারাবছর সেখানে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও শরতে তা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। প্রকৃতি যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। বর্ষাকালে স্বচ্ছ থই থই পানিতে সারি সারি নৌকা আর শরতে সাদা কাশফুলের দোলা যে কারও মন ছুঁয়ে যাবে। দুই থেকে তিন মাসব্যাপী কাশফুলের সাদা-ধূসর সাম্রাজ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
মনোমুগ্ধকর অপরূপ এই দৃশ্য দেখা যাবে, সিরাজগঞ্জ শহরের চর-মালশাপাড়ায় যমুনা নদীর দক্ষিণ পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত পৌনে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ক্রসবার-৩ বাঁধে। সবার মুখে চায়না বাঁধ-৩ নামে সুপরিচিত। ভাদ্র মাসের শেষদিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। এসময় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে। শরৎকাল এলেই সিরাজগঞ্জ শহরের চর-মালশাপাড়া (কাটাওয়াবদা) ক্রসবার-৩ এলাকায় কয়েক বছর ফুটছে কাশফুল। প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও ঠাস বোনা গুচ্ছ। হঠাৎ মনে হবে, সেখানে সাদা চাদর বিছানো। দক্ষিণ আকাশে তখন কিছু মেঘ জমেছে। থেমে থেমে মেঘও ডাকছে। নদীর বুক ছুঁয়ে শীতল হওয়া ভেসে আসছে কাশের বনে। হাওয়ায় দুলছে, নেচে উঠছে কাশফুল।
বিজ্ঞাপন
_Photo-5_20251011_183449651.jpg)
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষ এই কাশবনে বেড়াতে আসছেন। আশপাশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই কাশবনে বেড়াতে এসেছেন। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে।’ এ মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো। তখন দূর আকাশে চাঁদের আভা ফুটে উঠেছে। কখনও মেঘের আড়ালে সেই চাঁদ আটকা পড়ছে। সন্ধ্যার হালকা আঁধারে তখন যমুনার জলে যেন টুকরা টুকরা রুপালি কাচ ভাসছে। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ আবার দু-চারটি কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। আশপাশের শিশুরা কাশবনে খেলায় মেতে উঠেছে। এ যেন কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় মনে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীরা। বর্ষার কদমফুলের দিন শেষ হতে না হতেই শরতের কাশফুলের দেখা মেলে। বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা। এসব কাশবনের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন ঢল নামছে, ছোট বড় সবাই দেখার জন্য ছুটে আসছে।
যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটে আসছে এ কাশবনে। বিশেষ করে শেষ বিকেলে কাশবনের সৌন্দর্য আরও অনেকগুণ বেড়ে যায়। গ্রামীণ পরিবেশ ও সূর্যাস্তের সময় বেশি মানুষ ঘুরতে আসে। এ কারণে বেশিরভাগ পর্যটক আসছেন বিকেলে। জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন পর্যটক আসে ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নেয়ার জন্য। প্রতিদিন বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, কেউ সেলফি তুলছে, কেউ ভিডিও করছেন, আবার কেউ সময়টি নিজেদের মতো করে উপভোগ করছেন। কাশফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ সবাই।
শহর থেকে কাশবনে বেড়াতে এসেছেন নিমাই কর্মকার। তিনি বলেন, যমুনা নদীর পাড়ে যত দূর চোখ যায় শুধু সাদা সাদা কাশফুল। একসঙ্গে এত কাশফুল দেখতে বেশ ভালোই লাগে। এখানে এলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। এজন্যই সপরিবার কাশফুলে বেড়াতে এসেছি। সেইসঙ্গে ছবিও তোলা হলো। সময়টা দারুণ কাটলো।
ছাতিয়ানতলী মোড়গ্রাম টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ এখানে আসেন। এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। তবে এ ফুল বেশিদিন থাকে না। ১/২ মাসের মধ্যেই ফুল বাতাসে উড়ে যায়। কয়েকদিন পর এ ফুল আর দেখা যাবে না।
_Photo-1_20251011_183342061.jpg)
ঘুরতে আসা নাজিফা খাতুন বলেন, চায়না বাঁধ (ক্রসবার-৩) এলাকায় বিকেল হলেই কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী তরুণ তরুণীদের ভিড় জমে। এসময় তারা কাশফুলের উন্মাদনায় মেতে উঠে ছবি তোলে, ভিডিও করে। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। পরিবার নিয়ে ঘোরার মতো একটি জায়গা।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীর পাড়ে জন্ম নেওয়া সাদা কাশবন দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায়। তাদের নিরাপত্তায় প্রশাসন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
_Photo-2_20251011_183350938.jpg)
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এ, কে, এম, মনজুরে মাওলা বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলের মধ্যে কাশফুল অন্যতম। বাংলাদেশের সব নদ-নদীর তীরে প্রাকৃতিক জলাশয়ের ধারে বেশি কাশফুল জন্মে। কাশবন শুধু প্রকৃতিপ্রেমীদের মনের তৃপ্তি মেটায় না। এ কাশবন দিয়ে আগে অনেক মানুষ ঘর তৈরি করতেন। এখন পানের বরজে ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একই সঙ্গে রান্নার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সিরাজগঞ্জের যমুনার নদীর পাশে এ কাশফুল দেখতে শহরসহ জেলার বাইরে থেকেও লোকজন আসে। জায়গাটি অনেক সুন্দর। সবমিলিয়ে কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় সবাই।
প্রতিনিধি/এসএস

