নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ, তার নিচে বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুলের শুভ্র ঢেউ ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদীর পাড়ে এ যেন শরতের এক জীবন্ত চিত্রকল্প। কাশবনের সেই শান্ত সৌন্দর্যে তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় জেগে উঠছে উৎসবের আবহ। কেউ গাইছে প্রিয় গান, কেউ নাচছে তালের ছন্দে, আবার কেউ নিঃশব্দে ডুবে আছে প্রকৃতির গভীর রূপে। শুধু একটি ফুলের শুভ্রতা ঘিরে গড়ে উঠেছে এক অনন্য ঋতু উৎসব যেখানে প্রকৃতিও যেন মানুষকে আপন করে টেনে নিচ্ছে তার হৃদয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে মানুষ ছুটে আসছে এই কাশবনে। নদীর ধারে বিস্তৃত সাদা কাশফুল যেন এক অনন্ত শুভ্র প্রান্তর। বাতাসে দুলে ওঠা প্রতিটি কাশগুচ্ছ স্পর্শ করছে দর্শনার্থীদের হৃদয়। শরতের বিকেলে কেউ বন্ধুদের নিয়ে বসেছেন আড্ডায়, কেউ গানে গলা মিলাচ্ছেন, আবার কেউবা আনন্দে নেচে উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই অনন্য শোভা।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের শইফতপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন টাঙ্গন নদীর ধারে বামন শ্মশান ঘাটের পাশের কাশবন এবং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফেসাডাঙ্গী ব্রিজের ধারে ফুটে ওঠা শুভ্র কাশফুল দুটোই পরিণত হয়েছে মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থানে। আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের সঙ্গে মিলেমিশে দুলতে থাকা কাশফুলের ঢেউ প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরও স্নিগ্ধ ও শান্ত।
ফলে প্রভাতের শিশিরভেজা আলো থেকে শুরু করে গোধূলির লাল আভা পর্যন্ত মুখরিত থাকে এই দুটি কাশবন এলাকা। শুধু তরুণ-তরুণীরাই নয়, পরিবার-পরিজন নিয়ে আসছেন নানা বয়সের মানুষ। কেউ হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির স্নিগ্ধ দৃশ্যপটে, কেউবা ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করছেন অনন্য মুহূর্ত। শুভ্র কাশফুলে ভরে উঠেছে প্রকৃতি, আর এই শুভ্রতা ছুঁয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের মন।
কাশফুল দেখতে আসা দর্শনার্থী চম্পা, আশামুনি আক্তার নূপুর ও মেহেদী হাসান মাহফুজ ঢাকা মেইলকে জানান কাশফুল দেখলেই শরতের আসল আমেজটা অনুভব করা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে আসেন। প্রকৃতির এই রূপের কাছে এসে তারা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে শরৎ উৎসব পালনকারী তরুণী আবন্তিকা সরকার রচিতা ও মার্জান বলেন, ‘সারা বছর মানুষ যেমন আনন্দ-ভ্রমণে নানা দর্শনীয় স্থানে ছুটে যায়, তেমনি শরতের এই বিশেষ সময়ে টাঙ্গন নদীর কাশবনই হয়ে উঠেছে তরুণ-তরুণীদের উৎসবের প্রিয় ঠিকানা। বন্ধুদের সঙ্গে নাচে-গানে, হাসি-আড্ডায় আমরা পালন করছি শরতের রঙিন উৎসব।’
স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সৃজন এই উৎসবকে ঘিরে নিয়েছে নানা আয়োজন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন ‘আমরা বইয়ে পড়ি ষড়ঋতুর কথা, কিন্তু বাস্তবে অনেকেই তা অনুভব করতে পারে না। তাই নতুন প্রজন্মকে শরতের রূপ দেখাতে ও পরিচয় করিয়ে দিতে আমরা কাশবনে এসে এ উৎসবের আয়োজন করি।’

প্রকৃতির বুকে ফোটা কাশফুলের শুভ্রতা তরুণ সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর ভালোবাসার বার্তা। শরৎ এলেই তাই ঠাকুরগাঁওবাসীর উৎসব পায় এক নতুন আবেগ ও রঙে।
প্রতিনিধি/একেবি

