রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া

এম মোবারক হোসেন, পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া
প্রতি বছর শরৎ-হেমন্তে তেতুলিয়ায় পর্যটক বাড়ে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে।

হিমালয়-পাদদেশে মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলের চা-বাগান, সীমান্তঘেরা প্রকৃতি। সব মিলিয়ে পর্যটনে নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে তেঁতুলিয়া।

আজ বিশ্ব টুরিজম দিবস উপলক্ষে দেশের পর্যটন মানচিত্রে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সম্ভাবনাময় এক নাম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। দেশের সর্বউত্তরের এ সীমান্তবর্তী উপজেলা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে রূপ নিচ্ছে জনপ্রিয় গন্তব্যে।


বিজ্ঞাপন


হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তেঁতুলিয়া থেকে বর্ষা শেষে ও শীতের শুরুর দিকে দেখা মেলে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আন্তরিক মানুষের মিলনে গড়ে উঠেছে এক অনন্য পর্যটন পরিবেশ।

এ বছর শরতের শেষভাগে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ঘিরে তেঁতুলিয়ায় বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে তেঁতুলিয়ার প্রতিটি দর্শনীয় স্থান। তবে গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেও আজকে মেঘের আড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তবু নেই হতাশা পর্যটকদের। শান্ত প্রকৃতি, নদীর ধারে কাশফুল, চা-বাগানের সবুজ সমারোহ এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের। কেউ ঘুরেছেন বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, কেউ উপভোগ করেছেন মহানন্দা নদীর সূর্যাস্ত। কেউ আবার শিশুদের নিয়ে বেড়িয়েছেন রওশনপুর শিশুপার্কে কিংবা আনন্দগ্রামে।

thumbnail_20250926_075437

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মিথিলা জানান, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখলেও অন্যসব সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। এখানে মানুষের ব্যবহার, নিরাপত্তা ও পরিবেশ খুবই ভালো।


বিজ্ঞাপন


কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে তেঁতুলিয়ার স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোতে দেখা দিয়েছে আগাম বুকিংয়ের হিড়িক পড়েছে।

তেঁতুলিয়া ‘কাঠের বাড়ি’ আবাসিক হোটেলের পরিচালক মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় পুরো হোটেল বুকড। অতিরিক্ত পর্যটকদের চাহিদা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

দুই দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপার্থিব দৃশ্য

জান্নাত হোটেলের স্বত্বাধিকারী মো. রানা বলেন, পর্যটকরা আসলে আমাদেরও ব্যাবসা ভালো চলে। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলে পর্যটক বাড়ে, আমরাও সর্বদায় প্রস্তুত থাকি।

নর্থবাংলা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের পরিচালক রনি মিয়াজি বলেন, শরৎ, হেমন্ত ও শীতে তেঁতুলিয়ার পর্যটনের মৌসুম। কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য পর্যটকদের মূল আকর্ষণ হলেও এখানকার প্রকৃতি ও ঐতিহ্যও পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করছে।

IMG-20250926-WA0043

এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

টুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. রাব্বুল ইসলাম বলেন, তেঁতুলিয়া অত্যন্ত নিরাপদ পর্যটন এলাকা। দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।

আরও পড়ুন

কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সাদা কাশফুলের যুগল সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, প্রতি বছর শরৎ-হেমন্তে এখানে পর্যটক বাড়ে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

thumbnail_20240427_182736

উল্লেখ্য, তেঁতুলিয়া ও এর আশপাশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো—কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন পয়েন্ট

*বাংলাবান্ধা চারদেশীয় বর্ডার *জিরোপয়েন্ট

*মহানন্দা নদী ও সূর্যাস্ত

*কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট

*ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার

*রওশনপুর শিশুপার্ক ও আনন্দগ্রাম

thumbnail_20250821_125326

এছাড়া নদী ও সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতি ও পাহাড়ি আবহে স্থানীয় সংস্কৃতিও পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে।

তেঁতুলিয়া এখন আর শুধু সীমান্তবর্তী এক উপজেলা নয় - বরং হয়ে উঠছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পর্যটন হাব। সঠিক পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চল হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর