সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানাসলু জয়ে ইতিহাস গড়লেন দুই বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মানাসলু জয়ে ইতিহাস গড়লেন দুই বাংলাদেশি

পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম পর্বত নেপালের মানাসলু (২৬,৭৮১ ফুট) শৃঙ্গ কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই জয় করেছেন ডা. বাবর আলী। এটিই প্রথম কোনো বাংলাদেশির অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া শৃঙ্গ জয়। এই অভিযানে বাবরের সঙ্গে ছিলেন আরেক বাংলাদেশি পর্বতারোহী তানভীর আহমেদ। প্রথম চেষ্টাতেই শৃঙ্গ জয় করে তিনি ভেঙেছেন দীর্ঘদিনের একটি ট্যাবু।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান। আউটফিটার প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজন ট্রেক্স অ্যান্ড এক্সপিডিশন-এর স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ ভাণ্ডারির সূত্রেও বিষয়টি জানা গেছে। অভিযানের শিরোনাম ছিল 'মানাসলু অ্যাসেন্ট: ভার্টিক্যাল ডুয়ো'।


বিজ্ঞাপন


আয়োজক বাংলাদেশের স্বনামধন্য ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। ক্লাবের সভাপতি ফরহান জামান বলেন, পৃথিবীতে আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বত আছে মোট ১৪টি। এই উচ্চতায় ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অক্সিজেন থাকে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। তাই সাধারণত পর্বতারোহীরা ব্যবহার করেন কৃত্রিম অক্সিজেন।

586e90c43491278870c13cee679d8b38-68d6511e87fd4

কিন্তু বাবর আলী সেই নিয়ম ভেঙে পৃথিবীর অষ্টম সর্বোচ্চ পর্বত মানাসলু (২৬,৭৮১ ফুট) জয় করেছেন। এটি তার চতুর্থ আটহাজারি শিখর জয়। বাবরের সঙ্গে শিখরে ওঠেন তানভীর আহমেদ। তার এটি প্রথম আটহাজারি অভিযান এবং প্রথম প্রচেষ্টাতেই তিনি সফল হলেন।

ফরহান জামান বলেন, মানাসলুতে একই দিনে দুইবার উড়ল আমাদের লাল-সবুজ পতাকা। বাবরের স্বপ্ন ছিল অক্সিজেন ছাড়া আটহাজারি জয়, শুক্রবার ভোরে তিনি তা করলেন। অন্যদিকে তানভীর প্রমাণ করেছে, বিদেশে কোর্স না করেও আটহাজারি জয় সম্ভব।


বিজ্ঞাপন


৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে নেপালে যান বাবর ও তানভীর। ৭ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে পৌঁছান তিলচে গ্রামে। সেখান থেকে পাঁচ দিন হেঁটে তারা বেসক্যাম্পে আসেন। অভিযোজন প্রক্রিয়ায় তারা প্রথমে ওঠেন ক্যাম্প-১ (৫,৭০০ মিটার)। দ্বিতীয় দফায় তানভীর রাত কাটান ক্যাম্প-২ (৬,৩০০ মিটার) আর বাবর যান ক্যাম্প-৩ (৬,৭০০ মিটার) পর্যন্ত।

আরও পড়ুন

ঝুলন্ত অবস্থায় দুর্গম পর্বতে এক ঘণ্টা আটকা!

অভিযোজন শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর পৌঁছান ক্যাম্প-৪ (৭,৪০০ মিটার)। সেখান থেকে রাত নামতেই শুরু হয় শীর্ষ অভিযাত্রা। অবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোরে তারা দু'জনেই মানাসলুর চূড়ায় পৌঁছান। শিখরে ওঠার সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন গাইড বীরে তামাং ও ফূর্বা অংডি শেরপা।

এর আগে বাংলাদেশের সব আটহাজারি জয়ী পর্বতারোহীই প্রাতিষ্ঠানিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করেছিলেন। তানভীর সেই সুযোগ ছাড়াই দেশীয় সীমিত সুবিধায় অনুশীলন করে এই সাফল্য দেখিয়েছেন। অন্যদিকে বাবর লিখলেন আরও বড় ইতিহাস। এভারেস্ট, লোৎসে ও অন্নপূর্ণা-১ এর পর এবার মানাসলু জয় করে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অক্সিজেন ছাড়াই আটহাজারি শিখরে উঠলেন।

ফরহান জামান বলেন, তানভীর সামনে আরও পর্বতে যেতে চায়। বাবরের লক্ষ্য বিশ্বের সব ১৪টি আটহাজারি জয় করা। এখনো বাকি আছে ১০টি। আমরা আশা করি পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শিখর থেকে শিখরে উড়তে থাকবে লাল-সবুজ পতাকা।

tamal-1-1758786212

বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার নজুমিয়া হাটে। তিনি ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর সাধারণ সম্পাদক। তানভীর আহমেদ কিশোরগঞ্জ সদরের খরমপট্টির বাসিন্দা, পেশায় করপোরেট ম্যানেজার এবং একই ক্লাবের মাউন্টেনিয়ারিং সম্পাদক। ২০২২ সালে বাবরের পরই তিনি আমা দাবলাম জয় করেছিলেন।

এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সামুদা, ভিজুয়াল নিটওয়ারস, গিগাবাইট বাংলাদেশ, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, সিনোভেস্ট, সিয়েরা-রোমিও, আদিবা ফুটওয়্যার, ফোরএস অ্যাডভান্স টেকনোলজিস, জেনোভার্স, সোর্স অ্যাসোসিয়েটস, আইলেট ব্যাংকার্স, কাজী অ্যাগ্রো এবং ফ্রিয়েসভা।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর