খুলনা মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ সিটি বাইপাস সড়কের সোয়া দুই কিলোমিটার রাস্তাটিতে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার সামনে থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কটি খুলনা সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে।
এর মধ্যে ময়ূরী সেতুর পূর্বপাশের মালিক খুলনা সিটি করপোরেশন। এই অংশটি নিয়ে কেডিএ ও কেসিসির সমন্বয়হীনতা অন্তহীন। পশ্চিম অংশের দেখভালের দায়িত্ব এলজিইডির। এ অংশটি নির্মাণের পর একবার সংস্কার করা হলেও বর্তমানে তার বেহাল দশা। এখানে নিয়মিত ঘটে দুর্ঘটনা, ক্ষতি হয় যানবাহনের।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেসিসির নিয়ন্ত্রণে থাকা ৭৮০ মিটার রাস্তা নির্মাণে সম্প্রতি দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু হলেও মাঝপথে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বর্ষায় খানাখন্দে চলাচল অযোগ্য রাস্তাটিতে ইটের সোলিং দিয়ে আপাতত জনভোগান্তি লাঘবের চেষ্টা করছে কেসিসি।
আরও পড়ুন: সিলেটে ভয়াবহ লোডশেডিং
এদিকে এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীন অংশটি পুরোপুরি বেহাল। সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই সেখানে। মাত্র আড়াই বছর আগে পুনর্নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে নাজুক অবস্থা রাস্তাটির। সম্প্রতি এ অংশটুকু সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে এলজিইডি। তবে কবে বরাদ্দ পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সোনাডাঙ্গা থানার সামনে থেকে ময়ূরব্রিজ পর্যন্ত সড়কে ইটের সোলিংয়ের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক রাস্তায় ইট বিছানো শেষ হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগে রাস্তাটি সংস্কার না করায় বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে এলজিইডি অংশের রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। রাস্তার পাথর উঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তগুলোতে পানি জমে আটকে যাচ্ছে গাড়ি, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। দুই থেকে আড়াই ফিটের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। অংশটি রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে সড়কটিতে পরিবহন চলাচল নেমে এসেছে অর্ধেকে।
পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন, সড়কটির বর্তমান এ বেহাল অবস্থায় আন্তঃজেলা পরিবহন সেবায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং বাস-ট্রাক উল্টে যাত্রীদের প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শহর সম্প্রসারণে ২০১৩ সালের জুনে বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করে কেডিএ। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয় ২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কেডিএ সড়কটির ৭৮০ মিটার অংশ খুলনা সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করে। অন্য অংশ এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরক সংকটে মধ্যপাড়া পাথর খনিতে উৎপাদন বন্ধ
কেসিসি সূত্রে জানায়, সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পাশ থেকে ময়ূরব্রিজ পর্যন্ত ৭৮০ মিটার সড়কটি ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সড়কের দু’পাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে ড্রেন নির্মাণসহ হাইওয়ে স্টান্ডার্ডে এটি তৈরির কথা বলা হয়েছে। ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতায় টেন্ডার আহ্বান করতে পারছে না কেসিসি।
কেডিএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-২০১০ সালে রাস্তার জন্য ৬০ ফিট জমি অধিগ্রহণ করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়। ৭৮০ মিটার রাস্তার একটি অংশে দু’টি মৌজার (দেনারাবাদ ও বানিয়াখামার) সীমানা বিদ্যমান। ফলে পূর্বের ম্যাপ অনুযায়ী জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ করে নির্ধারণ করা বেশিরভাগ সীমানা পিলারের অস্তিত্ব নেই। অধিগ্রহণ করা জমির অনেক জায়গায় বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবির-উল-জব্বার বলেন, কেডিএ রাস্তায় থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ না করলে আমরা দরপত্র আহ্বান করতে পারছি না। তারা রাস্তা বুঝিয়ে দিলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। জনদুর্ভোগ লাঘবে আপাতত ইটের সোলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মারতোজা আল মামুন বলেন, কয়েক মাস আগে কেডিএর তত্ত্বাবধানে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খুলনা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিছু অংশে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা এখনও আছে। সেটা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে রাস্তাটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তারপর সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনার প্রতিটি প্রবেশদ্বারের এ ধরনের বেহাল দশা। ফলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাগাদা দিচ্ছি।
প্রতিনিধি/ এমইউ

