ফেনীতে গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যক্তি নিহতের খবর পাওয়া না গেলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ফেনী পৌরসভা থেকে সব ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তিনজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মাঝে ফেনী সদর উপজেলায় ১ জন, দাগনভূঞায় ১ জন ও ছাগলনাইয়া ১ জন রয়েছেন। আক্রান্তরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য বলছে, চলতি মাসে জেলায় মোট ১৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয় ৪৯ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪ জনে। আক্রান্তদের মাঝে ৯১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি ৩ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা নিচ্ছেন মহিউদ্দিন নামের এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে থাকলেও তাকে দেওয়া হয়নি মশারি। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়নি তেমন কোনো ওষুধ।
![]()
বিজ্ঞাপন
রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা দুই দিন ধরে এই সিটেই (আসনে) চিকিৎসা নিচ্ছি। ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য আলাদা কোনো স্থান আছে কিনা আমরা জানি না। প্রতিদিন সকালে ডাক্তার এসে কিছু ওষুধ লিখে দেয়। আমরা ফার্মেসি থেকে কিনে নিই। নার্সরা মশারি কিনতে বলেছে, এখনও তা কেনা হয়নি। ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়া হাসপাতাল থেকে ওষুধ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীর স্বজনরা।
নতুন ভবনের ৫ম তলায় দেখা যায়, সেখানে পৃথক একটি ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো হলেও বাস্তবে কোনো কার্যক্রম নেই। ওয়ার্ডের বিভিন্ন দরজায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা সাঁটানো হলেও বিশেষ এ ইউনিটে কোনো রোগী রাখা হচ্ছে না।
মেডিসিন ওয়ার্ডের হাসমত আরা আক্তার নামের রোগীর এক স্বজন জানান, দুই দিন ধরে আমাদের সিটের (আসনের) পাশেই ডেঙ্গু আক্রান্ত লোকটির চিকিৎসা চলছে। ৫ম তলায় ডেঙ্গু ইউনিট থাকলেও সেটি অজ্ঞাত কারণে অচল রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এখন পর্যন্ত একটি মশারি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তার কারণে আমরা সবাই সংক্রমণের ভয়ে রয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শোয়েব ইমতিয়াজ নিলয় বলেন, হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড ইউনিট করা হয়েছে। রোগীকে সেখানে না নিয়ে কি কারণে মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা আমি অবহিত নয়। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।
ফেনী পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেছেন, নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় ফেনী পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে বিশেষ টিম গঠন করে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ জানান, ডেঙ্গু মূলত এডিস মশার মাধ্যমে মানবদেহে ছড়ায়। এটি মানুষের শরীরের প্লাটিলেটকে অ্যাটাক করে এর সংখ্যা কমিয়ে দেয়। এতে করে কখনও কখনও আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রচুর পরিমাণ ডাব, স্যালাইন ও তরল পানীয় খাওয়াতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে।
![]()
এদিকে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। বাসার আশপাশে কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যে থাকতে হবে। হালকা আলোকে থাকতে হলে মশক প্রতিরোধক ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

