কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্র-জনতার সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক সময় কণ্ঠস্বর পত্রিকার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সাব্বির হোসেনের (২৭) ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাব্বির হোসেন কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি হামলাকারী হাসিবুল হোসেন শান্তসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
একই দিন সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত হাসিবুল হোসেন শান্তকে আটক করে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ১১টার দিকে সাংবাদিক সাব্বির হাসপাতালের ভেতরে চলমান আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে অবস্থান করছিলেন। দুপুর ১টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় হঠাৎ হামলা চালায় অভিযুক্ত শান্ত ও তার সহযোগী ৩-৪ জন।
প্রথমে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং জোর দাবি তোলে, ‘আগে আমাদের বক্তব্য নিতে হবে’। সাংবাদিক সাব্বির তখন শান্তভাবে অনুরোধ করে বলেন, ‘ভাই, একটু চুপ করেন, আমি এদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। এরপর আপনাদেরও নেব। অতিরিক্ত নয়েজ আসছে’। এ কথা বলার পরপরই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
হাসিবুল ও তার সহযোগীরা সাব্বিরের শার্টের কলার ধরে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এতে সাংবাদিকের নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয় এবং ঠোঁট কেটে রক্তক্ষরণ হয়। পরে আশপাশে থাকা আন্দোলনরত ছাত্ররা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে আটক হওয়া হাসিবুল হোসেন শান্ত হামলার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, সাংবাদিককে না চিনতে পেরে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির বিগত কমিটিতে কিছু অবিপ্লবী যুক্ত হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম সাব্বির তাদের লোক। তাই ভুলবশত এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি যে গণমাধ্যম কর্মী, সেটা আমি বুঝতে পারিনি’।
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন- বিলুপ্ত ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন। তিনি সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে যেকোনো পরিস্থিতিতে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
হামলার শিকার সাংবাদিক সাব্বির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি সকাল থেকে কাজ করছিলাম, আন্দোলন সুন্দরভাবে চলছিল। হঠাৎ তারা কেন আমার ওপর হামলা করল বুঝতে পারিনি। আমি মারাত্মক জখম হয়েছি, ঠোঁট কেটে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সাংবাদিকদের যদি ন্যূনতম নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে আমরা কীভাবে কাজ করব?
ঘটনার পর স্থানীয় সাংবাদিক মহল তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা জানান, স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহে নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত শান্তকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলার ঘটনা নতুন নয়। সারাদেশে সম্প্রতি একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকদিন আগে গাজীপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় সাংবাদিক তুহিন নিহত হওয়ার ঘটনা এখনও মানুষের দাগ কেটে আছে।
প্রতিনিধি/এসএস

