রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সেপটিক ট্যাংকে নিহত

‘তোরা বলে দে আমার বুকের মানিক কোথায়’ ছেলে হারানো বাবার আর্তনাদ

শুভ ঘোষ, মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

‘তোরা বলে দে আমার বুকের মানিক কোথায়’ ছেলে হারানো বাবার আর্তনাদ
সেপটিক ট্যাংকের দুর্ঘটনায় নিহত নির্মাণ শ্রমিক ফিরোজ মিয়ার বাবা জহিরুল ইসলামে আহাজারি ছবিটি রোববার বিকেলে তোলা -  ঢাকা মেইল।

‘আমার একমাত্র পুত, তুই কেন কেড়ে নিলি মালিক, কোন অপরাধে, এখন কে আর ডাকবে আমারে বাজান বলে, কে দিবে আমারে ওষুধ কিনে, আজ থেকে আর কেউ বলবে না, আম্মারে ভালো করে গরুর মাংস রান্না করতে বলবেন আব্বা, বাড়ি ফিরে একসঙ্গে খামু। ওই তোরা বলে দে আমার বুকের মানিক কোথায়'! বুকফাটা আর্তনাদ আর একমাত্র সন্তান হারানোর বেদনা সইতে না পেরে এভাবেই চিৎকার করে এসব কথা বলছিলেন মুন্সিগঞ্জ শহরের নির্মাণাধীন আবাসিক ভবনের সেপটিক ট্যাংকে কাজ করতে নেমে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ যাওয়া নিহত নির্মাণ শ্রমিক ফিরোজ মিয়ার বাবা জহিরুল ইসলাম।

রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে মুন্সিগঞ্জ বড় বাজার সংলগ্ন খালইস্ট এলাকার সিঙ্গাপুর প্রবাসী সবুজ কাজীর নির্মাণাধীন ভবনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে কাজ করতে নেমে তিন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_20250831_164828(1)

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন শ্রমিকের নিথর দেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। ভবন মালিকের গাফিলতি ও সেফটি ট্যাংকির ভেতরে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকেই সিঙ্গাপুর প্রবাসী কাজী সবুজের নির্মাণাধীন ভবনের সোয়ারেজের কাজসহ অন্যান্য কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। পরে দুপুরে ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করে ঢাকনা লাগানোর জন্য এক শ্রমিক ট্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করতে আরও দুই শ্রমিক ট্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ট্যাংকের ভেতরে তাদের ঝাপটা ঝাপটির শব্দ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় স্থানীয়রা।

thumbnail_20250831_164849(1)


বিজ্ঞাপন


শাহিনের সঙ্গে কাজ করতে আসা পাভেল বলেন, শাহীনসহ আমরা একসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ স্টেডিয়ামের কাছে ভাড়া থেকে কন্ট্রাক্টরের অধীনে বাড়ি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করি। শাহিন এখানে একটি বিল্ডিং নির্মাণের কাজ করছিল। পাশের সেপটিক ট্যাংকি পরিষ্কার করতে আসা একজন ওকে ডেকে নিয়ে আসে। পরের সেপটিক ট্যাংকিতে নেমে শাহিনসহ তিনজন মারা যায়। ওর বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়।

আরও পড়ুন

মুন্সিগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে নেমে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে। পরে একে একে তিনটি নিথর মরদেহ সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে তারা। ভবন মালিকের গাফিলতি ও শ্রমিকদের অসচেতনতায় ট্যাংকের ভেতরে জমে থাকা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের কারণে অক্সিজেন স্বল্পতায় এই মৃত্যু বলছে জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, উপ সহকারী পরিচালক, মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ভবন মালিকের শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে গাফিলতির ফলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

thumbnail_20250831_165105(1)

নিহত শ্রমিকদের সহকর্মী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাভেল বলেন, নিহত ফিরোজসহ আমরা একসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ স্টেডিয়ামের কাছে লিচুতলা এলাকায় ভাড়া থেকে কন্ট্রাক্টরের অধীনে বাড়ি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করি। নিহত শাহিন এখানে একটি বিল্ডিং নির্মাণের কাজ করছিল। পাশের সেপটিক টাংকি পরিষ্কার করতে আসা একজন ওকে ডেকে নিয়ে আসে। পরের সেপটিক ট্যাংকিতে নেমে শাহিনসহ তিনজন মারা যায়। ওর বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। এছাড়া নিহত ফিরোজের বাবা মুন্সিগঞ্জ শহরের আনসার ক্যাম্পে দিনমজুরের কাজ করেন।

thumbnail_20250831_170050(2)

এদিকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত হলে, আইনগত প্রক্রিয়ার শেষে নিহত তিন শ্রমিকের মরদেহ পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় শাহীন ইসলাম (২৮), ফিরোজ মিয়া (১৮) ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম (২৫) নিহত হয়েছে। তাদের বাড়ি পঞ্চগড়, রংপুরের গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলায়া বলে পারিবারিক সূত্রে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতাদের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী নেওয়া হবে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর