রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পিরোজপুরের ভাসমান পেয়ারা বাজার দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত

জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

পিরোজপুরের ভাসমান পেয়ারা বাজার দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর ও কুড়িয়ানার ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা বাগানে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। দেশের একমাত্র ভাসমান পেয়ারা বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলটি আজকাল শুধু কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য নয়, বরং পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে।

জুলাই-আগস্ট মাসে এ অঞ্চলে পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে ওঠে এই জনপদের নদীঘেরা বাগানগুলো। নদীপথে নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে পেয়ারা ও আমড়া সংগ্রহের দৃশ্য, সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নির্জন পরিবেশ দর্শনার্থীদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: গোয়াইনঘাটে স্থানীয়দের সঙ্গে পর্যটকদের হাতাহাতি

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন এই এলাকায়। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকা ভাড়া করে বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে টাটকা ফল কিনছেন।

স্থানীয় আদমকাটি গ্রামের কৃষক সুভাষ মন্ডল বলেন, প্রচুর পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে, তার পাশাপাশি এখন পর্যটকদের কারণে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। অনেকেই নৌকা, হোটেল, গাইডিং সার্ভিস দিয়েও রোজগার করছেন। পেয়ারা বাগানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট হোটেল, খাবার দোকান এবং স্থানীয় হস্তশিল্প বিক্রির স্টল। ফলে একদিকে যেমন কৃষকরা পাচ্ছেন ন্যায্যমূল্য, অন্যদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে স্থানীয়দের জন্য।

Screenshot_2025-08-07_175018ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আলমগীর হোসেন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভাসমান পেয়ারা বাজারের ভিডিও দেখে আগ্রহ জন্মায়। এখানে এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। নৌকায় বসে চারদিকে সবুজ পেয়ারা বাগান আর পাখির ডাক শুনে মন ভালো হয়ে যায়। এটা বাংলাদেশের এক অনন্য সৌন্দর্য। 


বিজ্ঞাপন


একই অভিমত বরিশাল থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী মিঠুরও। তিনি বলেন, বন্ধুদের নিয়ে এসেছি। এখানে এসে অনেক কিছু জানার ও দেখার সুযোগ হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পেয়ারা কেনা, নৌকা ভ্রমণ সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা দারুণ।

আরও পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়, যোগ দিয়েছেন স্থানীয়রাও

স্থানীয় প্রশাসনও পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিশ্চিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভাসমান পেয়ারা বাজার পর্যটকদের কাছে এখন অন্যতম আকর্ষণ। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নৌকা চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের আয়ের নতুন দ্বারও খুলে যাচ্ছে এই পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে।

তিনি আরও বলেন, এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারিভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাই, এই স্থানটি শুধু পেয়ারা উৎপাদনের জন্য নয়, দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও দেশ-বিদেশে পরিচিত হোক। এই ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা বাগান ও ভাসমান বাজার পর্যটন শিল্পের এক অনন্য সম্ভাবনা হয়ে উঠছে, যা শুধু নেছারাবাদের নয়, পুরো দেশের গর্ব।

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর