নেত্রকোনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা উপলক্ষে পুলিশ লাইনস স্কুল দু’দিন বন্ধ রাখার নোটিশ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে নিজেদের দেওয়া নোটিশকেই ‘ফেইক’ বলে দাবি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এতে সমালোচনা আরও বেড়ে যায়। অনেকে আগের নোটিশ ও পরের নোটিশ দুটো একত্রে পোস্ট করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। আগামী রোববার দুপুরে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে পথসভা করবে দলটি। এ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দিতে তৎপর আছে।
![]()
এদিকে জেলা পুলিশ পরিচালিত শহরের কুড়পাড় এলাকায় পুলিশ লাইনস স্কুল দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই বিদ্যালয়ে এনসিপির কর্মসূচি উপলক্ষে আসা পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করবেন বলে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) একটি নোটিশ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার এক পর্যায়ে আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে নতুন করে ‘প্রতিবাদলিপি’ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, আগের নোটিশটি সঠিক নয়। রোববার ও সোমবার বিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস হবে।
বিজ্ঞাপন
এনসিপির দলীয় সূত্র ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে এনসিপির পথসভা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর কক্সবাজারে এনসিপির এক নেতার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে চকরিয়ায় মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর থেকে দলটি যেখানে সমাবেশ করছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আগামী রোববার নেত্রকোনায় দলটির সমাবেশ ঘিরে চার শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বাইরে থেকে ৬৬ জন পুলিশ সদস্যকে আনা হবে। তাদের থাকার জন্য নেত্রকোনা পুলিশ লাইনস স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ জারি করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, রোববার নেত্রকোনায় এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে নেত্রকোনায় আসা পুলিশ ফোর্স এই বিদ্যালয়ে অবস্থান করবে। সে জন্য রোববার ও সোমবার বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা চলবে। ২৭ তারিখের পরীক্ষা ২৯ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। নোটিশটি যথারীতি বিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ নেটিজেনরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই লিখেছেন, এভাবে একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশের কারণে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ রাখা উচিত নয়।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইলফোনে বলেন, এনসিপির সমাবেশ উপলক্ষে বাইরে থেকে বাড়তি পুলিশ আসবে, তাদের পুলিশ লাইনস স্কুলে থাকতে দেওয়া হবে। তাই বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রায় ১০টির মতো বড় শ্রেণিকক্ষ আছে। আশা করি, থাকার সমস্যা হবে না।’ তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে ১৬ জন শিক্ষক পাঠদান করেন।
তবে সমালোচনার মুখে আজ শুক্রবার বেলা ১১টার পর নতুন করে একটি ‘প্রতিবাদলিপি’ দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত এই প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, এনসিপির নেত্রকোনা আগমন উপলক্ষে একটি বিভ্রান্তিমূলক নোটিশ একটি পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছে। এটি স্কুলের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধিমূলক ও বিভ্রান্তিকর একটি ষড়যন্ত্র। প্রকৃতপক্ষে এটি সঠিক নয়। আগামী রবি ও সোমবার যথারীতি বিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা চলবে।
![]()
প্রতিবাদলিপির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক আজ দুপুর ১২টার দিকে বলেন, আগের নোটিশটি ‘ফেইক’ ছিল। আগেরটি তার স্বাক্ষর ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি। এখানে কীভাবে কী হয়েছে তিনি বুঝতে পারেননি। কোনো ধরনের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও নেত্রকোনা-২ আসন থেকে এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ফাহিম রহমান খান পাঠান বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। আমাদের বিব্রত করার জন্যই কোনো একটা চক্র ইচ্ছাকৃতভাবেই এসব করছে। অন্যান্য জেলার মতো আমরাও শুধু সভা সমাবেশ করার আগে প্রশাসনের কাছে আইনি নিরাপত্তা চেয়েছি। পুলিশ লাইন্স স্কুলের সাথে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সাথে আমাদের কারও পরিচয়ও নেই। এনসিপির প্রোগ্রাম উপলক্ষে পুলিশ লাইন্স স্কুল বন্ধ করতে পারে না। আর করলে এর দায় একান্তই স্কুল কর্তৃপক্ষের। এনসিপির প্রোগ্রাম উপলক্ষে কেউ কোনো প্রতিষ্ঠান, কাজ কর্ম বন্ধ রাখলে তার দায় এনসিপি নিবে না। আপনারা যতভাবেই এ নিয়ে যাচাই বাছাই করুন এর সাথে এনসিপির কোনো সম্পৃক্ততা পাবেন না। এটি নিছক একটি ষড়যন্ত্র। তদন্ত করে এটি বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
![]()
এ বিষয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সাহেব আলী পাঠান বলেন, পুলিশ লাইনস স্কুলে পুলিশ অবস্থান করবে বলে পরীক্ষা স্থগিত ও বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এই বিষয়টা সঠিক নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াতে হয়ত বলা হচ্ছে। স্কুল সঠিক নিয়মেই চলবে। আর বাইরে থেকে আসা ৬৬ জন পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনসেই রাখা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

