রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রিপোর্টে সাজিদের মৃত্যু রাত সাড়ে ৩টায়, শিক্ষার্থীদের দাবি হত্যা

রাকিব রিফাত, ইবি
প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

রিপোর্টে সাজিদের মৃত্যু রাত সাড়ে ৩টায়, শিক্ষার্থীদের দাবি হত্যা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যু আগের দিন বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টার দিকে হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সোমবার (১৯ জুলাই) ২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রুমন রহমান মৃত্যুর সময়ের বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিস্তারিত ফরেনসিক রিপোর্টের কাজ চলমান রয়েছে। এ তথ্য জানার পর প্রধান ফটক আটকে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।


বিজ্ঞাপন


1000115242

এসময় শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- সাজিদ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক ও দ্রুত বিচার। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে বিচার সম্পন্ন করা, সাজিদ হত্যার জন্য ক্যাম্পাস বাদী হয়ে মামলা করবে। ক্যাম্পাস সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিবে, মামলার তদন্তের ভার পিবিআইকে দিতে হবে, অধিকতর তদন্ত ও সাজিদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য প্রশ্নের সমাধানের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। কারণ আমরা প্রশাসনকে বিশ্বাস করি না, সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, প্রয়োজনে আলটিমেটাম দাও। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ও প্রতি হলের প্রতি ফ্লোরে সিসি ক্যামেরা লাগবে, নিরাপত্তা প্রশাসনের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্পষ্ট বিবৃতি দিবে এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে, ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রদানের তাগিদ দিতে হবে, উল্লেখিত দাবিসমূহ না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়কে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হবে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাজিদের পোস্টমর্টেমের সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে সাজিদের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় পোস্টমর্টেম করা হয়। এসময় থেকে ৩০ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ গত বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তবে গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে তার মরদেহ ভেসে উঠতে দেখেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন

ইবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে তথ্য চেয়ে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি

সাজিদের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে আনুমানিক রাত সাড়ে তিনটার দিকে মৃত্যু হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাস থেকে শহরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসমূহ আটকে যায়। এসময় তারা নিরাপদ ক্যাম্পাস, সুষ্ঠু প্রতিবেদন, পুরো ক্যাম্পাস ক্যামেরায় আওতায় আনাসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান ছিল।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু প্রতিবেদন এবং বিচার দাবিতে আমরা দলমত নির্বিশেষে এককাতারে দাঁড়িয়েছি। আমরা দেখছি বিভিন্ন বিষয়ে আমরা অন্যদের থেকে জানতে পারছি কিন্তু প্রশাসন কিছু জানাতে পারছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে আমরা প্রশাসন ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ভবন অচল করে দেওয়া হবে।

1000115303

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়েম আহমেদ বলেন, এমন ঘটনা সংবাদ পত্রিকায় শোনার পর আমার বাড়ি থেকে ক্যাম্পাস ছেড়ে দিতে বলেছে। আমরা ক্যাম্পাসে কেউই নিরাপদ না। একটা ঘটনা ঘটার পর তার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায় না। নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলাসহ সাজিদ হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ছয়দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।

হাসানউল বান্না ওলি বলেন, প্রশাসন সাজিদ হত্যার ঘটনা নিয়ে প্রশাসন গাফিলতি দৃশ্যমান। আমরা এই প্রশাসনকে জানাতে চাই, শিক্ষার্থীরা আপনাদের টনক নাড়িয়ে ছাড়বে। সাজিদকে কবরে রেখে আমরা এমন অবস্থায় ক্লাস পরীক্ষায় বসতে পারি না।

আরও পড়ুন

ইবির পুকুর থেকে শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

ডা. রুমন রহমান বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদ আব্দুল্লাহ বুধবার দিবাগত রাতে (আনুমানিক সাড়ে ৩টা) মারা যান। বিস্তারিত ফরেনসিক রিপোর্টের কাজ চলমান। এসময় আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি ওই মেডিকেল বোর্ডের সভাপতির কাছে জানার অনুরোধ করেন।

প্রো-ভিসি ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তার বাবা একটা মামলা করেছে। পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া বা প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করা এই বিষয়ে এখনও পরিকল্পনা করা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত  বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুলাহর মৃতদেহ পুকুরে ভাসতে দেখে। এদিন বেলা সাড়ে ৬টায় পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। সাঁতার জানা সত্ত্বেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে রহস্যজনক মৃত্যু মনে করছিলেন সাজিদের স্বজন ও সহপাঠীরা। অনেকে হত্যাকাণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে সাজিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর