চলমান কোটা সংষ্কার আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৭ জুলাই সারাদেশের মতো রংপুরেও উত্তেজনা ছিল চরমে। পুরো জেলায় উত্তেজনা থাকলেও বিশেষ করে রংপুর নগরী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এলাকাগুলোর পরিবেশ ছিল থমথমে। কেননা জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ হয়েছিল রংপুরে।
সেদিন রংপুরে যা যা ঘটেছিল:
বিজ্ঞাপন
আবু সাঈদের জানাজা ও দাফন:
গত বছর ১৬ জুলাই চাকুরির কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। গত বছরের আজকের দিনে (১৭ জুলাই) সকালে রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। এর আগে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আবু সাঈদের জানাজা ঘিরে মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকে অনেকে জানাজায় অংশ নিতে জাফরপাড়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন।
এর আগে (১৬ জুলাই, ২০২৪) রাত ২টার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। মরদেহ পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ছেলের মরদেহ দেখে বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম বার বার মূর্ছা যান। তাদের কান্নায় ওই এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে আসে। সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপ ছিল দ্রুত আবু সাঈদের জানাজা ও দাফন কার্য সম্পন্ন কারার জন্য।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হলত্যাগের নির্দেশ:
বিজ্ঞাপন
পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যারয় কর্তৃপক্ষ। ১৬ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বেরোবি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে (১৭ জুলাই) দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশের পর সকাল থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন সকাল ৭টায় দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ মুখতার ইলাহি হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল থেকে শিক্ষার্থীরা বেডিংপত্র নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন। কেউ রিকশা, আবার কেউ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
আরপিএমপি পুলিশে কমিশনারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন:
অন্যদিকে, ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭ জুলাই সরেজমিনে পরিদর্শনে যান তৎকালীন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। তিনি ১৭ জুলাই দুপুরের দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েল ক্ষতিগ্রস্থ হলসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। এসব ঘটনায় আইনহত প্রক্রিয়া চলমান বলে সেসময় জানান তিনি।
বেরোবি উপাচার্যের শোক:
১৭ জুলাই রাতে সাড়ে ৮ টার দিকে কোটা সংস্কারে আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোক প্রকাশ করেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ। এসময় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি। বিষয়টি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ জুলাই চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি ছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
প্রতিনিধি/টিবি

