চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘জুলাই স্মৃতি আন্তঃঅনুষদ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫’-এর এক ম্যাচ হাতাহাতির ঘটনায় পণ্ড হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিজ্ঞান অনুষদ ও মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের মধ্যকার ম্যাচে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খেলার ৪৮ মিনিটের মাথায় একটি পেনাল্টি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রথম দফার উত্তেজনা শুরু হয়। বিজ্ঞান অনুষদের এক খেলোয়াড়ের শটে বল মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের এক খেলোয়াড়ের হাতে লাগলে রেফারি ইয়াসিন আরাফাত পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন।

শুরুতে মেরিন সায়েন্সের খেলোয়াড়রা সিদ্ধান্ত মানতে না চাইলেও পরে তা মেনে নেন। তবে এরপর পেনাল্টি কিক নেওয়ার আগমুহূর্তে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির সূত্র ধরে বিজ্ঞান অনুষদের এক সমর্থক মাঠে ঢুকে মেরিন সায়েন্সের এক খেলোয়াড়কে ঘুষি মারেন। এতে দ্বিতীয় দফায় হাতাহাতি শুরু হয়।
রেফারি ইয়াসিন আরাফাত জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তিনি খেলা পরিচালনা কমিটির নির্দেশে মাঠ ত্যাগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, মেরিন সায়েন্স অনুষদের খেলোয়াড়রা তুলনামূলক আক্রমণাত্মকভাবে খেলায় অংশ নিচ্ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমীন, মেরিন সায়েন্সের সাবেক ডিন অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জালাল, সহকারী প্রক্টর মো. নুরুল হামিদ কাননসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। পরিস্থিতি শান্ত হলে খেলা পরিচালনা কমিটি গোলশূন্য অবস্থায় ম্যাচটি স্থগিত ঘোষণা করেন।
তবে উত্তেজনা সেখানেই থেমে থাকেনি। খেলা শেষে মাঠ ত্যাগের সময় ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন বিজ্ঞান অনুষদের খেলোয়াড়দের পক্ষে মেরিন সায়েন্সের ইয়াসিন নামের এক খেলোয়াড়কে আঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে আবারও তৃতীয় দফায় হাতাহাতি শুরু হয়।
![]()
ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে গেলে মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ আফতাব উদ্দিন ইমাম হোসেনের মোটরসাইকেল থামিয়ে শার্টের কলার ও হাতে ধরে টেনে নামানোর চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে চবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদের গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইমাম হোসেন দাবি করেন, তিনি কাউকে আঘাত করেননি। বরং পরিস্থিতি বুঝে ঘটনাস্থল ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সবাই তার দিকেই এগিয়ে আসায় তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
অপরদিকে, অধ্যাপক শেখ আফতাব উদ্দিন বলেন, আমি তাকে (ইমাম হোসেনকে) আমাদের অনুষদের খেলোয়াড়দের আঘাত করতে দেখেছি, তাই তাকে আটকাতে গিয়েছিলাম।
ঘটনার বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জালাল বলেন, খেলার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে টুর্নামেন্ট চলমান থাকবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর মো. নুরুল হামিদ কানন বলেন, প্রথমে পেনাল্টি নিয়ে তর্ক, পরে হাতাহাতি এবং সমর্থকদের জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও ক্রীড়া উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনা ‘জুলাই স্মৃতি’র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে টুর্নামেন্ট চলবে এবং সময় অনুযায়ী পরবর্তী খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিনিধি/টিবি

