শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

৯৮ বছরেও স্বাদ কমেনি হোবা ঘোষের মিষ্টির!

আবু সাঈদ রনি
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২২, ০২:৪৭ এএম

শেয়ার করুন:

৯৮ বছরেও স্বাদ কমেনি হোবা ঘোষের মিষ্টির!

মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে জল আসতে বাধ্য অনেকের। বাঙালি পরিবারে খাওয়া-দাওয়ায় অতি জনপ্রিয় উপকরণ মিষ্টি। সমাজে যে কোনো উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানই হোক না কেন প্রথমেই চলে আসে মিষ্টির প্রসঙ্গ। আদিযুগের লাড্ডু থেকে শুরু করে সন্দেশ, কালোজাম পেরিয়ে আজ মিষ্টির প্রকারভেদ শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। মিষ্টিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অগণিত নামী-দামী মিষ্টি বিক্রয়কেন্দ্র। 

স্বাদ ও আকারে ভিন্নতা নিয়ে হরেক রকম নামকরণে জনপ্রিয় বিভিন্ন জাতের মিষ্টি। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল কিংবা মায়ানমারে সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মিষ্টির ব্যবহার অত্যন্ত প্রবল। কথিত আছে এই অঞ্চলের মানুষ যে পরিমাণ মিষ্টি ব্যবহার করেন এই পরিমাণ মিষ্টি কখনো বিশ্বের অন্য দেশে ব্যবহার করা হয় না। তেমনই এক প্রসিদ্ধ মিষ্টি রাজশাহীর হোবা ঘোষের মিষ্টি। 


বিজ্ঞাপন


রাজশাহী পুলিশ সুপারের কার্যালয় পেরিয়ে তাকালেই চোখে পড়বে হোবা ঘোষের মিষ্টির দোকান। স্থায়ী বড়সড়ো কোনো দোকান নয়, সরু রাস্তার কোল ঘেঁষেই টং দোকানে তার মিষ্টির দোকান। নেই আহামরী কোনো সাজসজ্জাও। ফুটপাতের আর দশটি দোকানের মতোই সাদামাটা তার দোকান। অতি সাধারণ ছাউনির নিচে একটি বেঞ্চে খদ্দেরের বসার ব্যবস্থা। তবুও মিষ্টি আর পাউরুটি খেতেই ক্রেতাদের ভীড় থাকে  দিনজুড়ে। 
  
জানা গেছে, দোকানটি দেখতে অতি সাধারণ হলেও ইতিহাসে মিশে রয়েছে ৯৮ বছরের ঐতিহ্য। ১৯২৪ সালে দোকান শুরু থেকে এখনও খদ্দেরের চাহিদা মিটিয়ে আসছে দোকানটি। মিষ্টির রসে ডুবিয়ে হোবা ঘোষের নিজস্ব কায়দায় কাঁটা পাউরুটির স্বাদ নিতে ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকার লোকজন। একবার খেয়ে পরের বার আসার আগ্রহ দেখায়নি এমন কাউকে পাওয়া দুরুহ।
hoba ghoshজানা যায়, চার প্রজন্ম ধরে মিষ্টির দোকান চালাচ্ছেন হোবা ঘোষরা। ১৯২৪ সালে হোবা ঘোষের দাদা প্রেমলাল ঘোষের হাতেই যাত্রা শুরু দোকানটির। পরে বাবা লাড্ডু ঘোষের হাত ঘুরে ১৯৫৯ সালে দায়িত্ব নামে হোবা ঘোষের কাঁধে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ছেলে বিমল কুমার ঘোষ ও অমল কুমার ঘোষ। 

শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে বংশপরাম্পরায় চলে আসা দোকানটি। তবুও জনপ্রিয়তা কমেনি মিষ্টির। রাজশাহী কোর্ট এলাকার সরকারি-বেসরকারি দফতর ও বিভিন্ন কাজে ছুটে আসা মানুষের পছন্দের শীর্ষে হোবা ঘোষের মিষ্টি। ব্যবসা চালুর ৯৮ বছরেও জনপ্রিয়তায় ঘাটতি পড়েনি ন্যূনতম। 

কথা বলে জানা যায় এখনও প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ পাতিল মিষ্টি বিক্রি করেন হোবা ঘোষ। প্রতি পাতিলে মিষ্টি থাকে ১৪ থেকে ১৫ কেজি। জাতভেদে প্রতি কেজি মিষ্টির দাম পড়ে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা। আর খুচরা প্রতিটি মিষ্টি ও পাউরুটির দাম রাখেন ২০ টাকা। 

এ বিষয়ে মনোরঞ্জন ঘোষ হোবা ঢাকা মেইলকে জানান, মিষ্টির দোকানটি শুরুর দিকে সাগরপাড়া বটতলার মোড়ে ছিল। পরে কোর্ট চত্ত্বরের ভেতরে দোকানটি স্থানান্তর করা হয়। এক সময় কোর্ট এলাকার আশপাশে কোনো খাবারের দোকান ছিল না। তখন রমরমা ব্যবসা ছিল ওই মিষ্টির। কোর্ট ভবন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় বা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজে আসতেন, সবাই একবারের জন্য হলেও এই মিষ্টির স্বাদ নিতে দোকানটিতে ঢুঁ মারতেন। 


বিজ্ঞাপন


মিষ্টি তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে আমাদের বাড়িতেই অনেক গাভী ছিল। সেই গাভীর দুধ থেকে ছানা তৈরি করে মিষ্টি বানানো হতো। বর্তমানে গাভীর দেখভাল করা ও গোখাদ্যের দাম বাড়ায় গরু পালন কঠিন হয়ে গেছে। সেজন্য বাহির থেকে দুধ কিনে এনে বাড়িতে মিষ্টি তৈরি করা হয়।
hoba ghoshতিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বাবা জাতীয় নেতা কামারুজ্জামানও আমার দোকানের মিষ্টি খেয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মাদার বখশ, বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের গভর্ণর আতাউর রহমানের মতো গুণীজনেরাও স্বাদ নিয়েছেন এই মিষ্টির। সুযোগ পেলেই তারা এই মিষ্টি খেতে আসতেন।’

জানতে চাইলে হোবা ঘোষের ছোট ছেলে অমল কুমার ঘোষ বলেন, আমাদের মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির এই কাজ অনেক পুরনো। জন্মের পর থেকেই এসব দেখে বড় হয়েছি। চার পুরুষ ধরে এই মিষ্টি বিক্রি করেই সংসার চলে। আর এই মিষ্টির আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে মিষ্টি তৈরির যাবতীয় কাজ পরিবারের লোকেরাই করে থাকে। বাহিরের কাউকে কোনো কাজে লাগানো হয় না। 

হোবা ঘোষের মিষ্টির প্রশংসা করেন রাজশাহী জজ কোর্টের এক আইনজীবী। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হোবা কাকার মিষ্টি অত্যন্ত ভালো। রাজশাহীতে ওকালতির তাগিদে প্রায়ই আমি এই মিষ্টি খাই। আজও ৫ কেজি মিষ্টি নাটোরে পাঠানোর জন্য কিনলাম। পুরো রাজশাহীজুড়েই হোবা কাকার মিষ্টি অনেক প্রসিদ্ধ।’ 

সোনালী ব্যাংক রাজশাহীর কোর্ট শাখায় কর্মরত আরও একজন এই মিষ্টির প্রশংসা করে জানান, তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও সুযোগ হলেই হোবা ঘোষের মিষ্টির স্বাদ নেন।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর