শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

রাবির ৭৩-এ পদার্পণ

তানভীর খান তরুণ, রাবি
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রাবির ৭৩-এ পদার্পণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • গবেষণা ও র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষে, উচ্চশিক্ষা ও বিসিএসেও সফলতা
  • শিক্ষা-গবেষণায় সফলতা থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে সংকট কাটেনি

পদ্মাতীরের এক কুঠিবাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে দেশের শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) পার করেছে ৭২টি বছর। পদার্পণ করেছে ৭৩ বছরে। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিতে রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। উত্তরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ দেশের অন্যতম মূল্যবান বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।


বিজ্ঞাপন


তবে প্রতিষ্ঠার সাত দশকে উল্লেখযোগ্য অনেক অর্জন থাকলেও এখনো শিক্ষকের ঘাটতি, আবাসন সংকট ও সেশনজটের মতো সমস্যাগুলো কাটেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ১২ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা হাজারেরও বেশি। ৭৫৩ একরজুড়ে বিস্তৃত ক্যাম্পাসে রয়েছে ১২টি অনুষদ, ৫৯টি বিভাগ ও ছয়টি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ আধুনিক অবকাঠামো। এছাড়াও রয়েছে ১৪টি একাডেমিক ভবন, ১৭টি আবাসিক হল, আন্তর্জাতিক ডরমিটরি, গ্রন্থাগার, আইসিটি সেন্টার, জাদুঘর, স্টেডিয়াম, সুইমিং পুলসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা।

গবেষণায় গৌরবজনক অবস্থান
শিক্ষা ও গবেষণায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গৌরবজনক অবস্থান গড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার সাফল্যের মধ্যে রয়েছে:

  • হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মসলিন পুনরুদ্ধার;
  • পানিকে আর্সেনিকমুক্ত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন;
  • গ্রিন চিলি পাউডার ও সজনে পাতার গুঁড়া তৈরি;
  • চার ধরনের সবজি থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান আবিষ্কার;
  • তুঁত গবেষণায় ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সম্ভাবনা;
  • পাটের বিকল্প আঁশ উদ্ভাবন;
  • উন্নত প্রজাতির মাছ চাষ ও বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের আটটি প্রজাতি ফিরিয়ে আনা;
  • বিরল অর্কিড কাঞ্চন ও ফুল দিয়ে জীবন্ত চিত্রকর্ম;
  • মাটি ছাড়াই ঘাস ও আনারস চাষে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি।

সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো লবণ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণের টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন রাবির একজন অধ্যাপক। আরেকজন অধ্যাপক প্লাজমা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে ফলন বৃদ্ধিতে সফলতা পেয়েছেন। এসব গবেষণা দেশের বাস্তব ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আরও পড়ুন—

উচ্চশিক্ষা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
গত ছয় মাসে ৩৪ জন শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন। সম্প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থী আমেরিকার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন।

গবেষণায় রাবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

  • নেচার ইনডেক্স র‍্যাংকিং (মার্চ ২০২৫) অনুযায়ী দেশের মধ্যে গবেষণায় শীর্ষস্থান;
  • স্কোপাস জরিপে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম;
  • ইউএস গ্লোবাল নিউজ র‍্যাংকিং ২০২৫ অনুযায়ী বিশ্বে গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ৬৩৮তম;
  • ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাংকিং (জানুয়ারি ২০২৫) অনুযায়ী দেশের শীর্ষস্থান;
  • বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষক তালিকায় ভিসিসহ ১৫ জন রাবি গবেষক।
rubi
রাবির মসজিদে আড়াই হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।

বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে
২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে ৯টি দেশের ৩৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন।

বিসিএস ও বিচার বিভাগে সাফল্য

  • ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় রাবির ৬২ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত;
  • পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৪র্থ, প্রশাসন ক্যাডারে ৫ম স্থান;
  • ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় আইন অনুষদ থেকে ২৮ জন সহকারী জজ হিসেবে মনোনীত;
  • গত চার বছর ধরে বিচার বিভাগীয় পরীক্ষায় টানা প্রথম স্থান অর্জন।
ru-hall
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হল

চলমান সংকট ও উন্নয়নের পদক্ষেপ
তবে এসব অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষক ও আবাসন সংকট এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। তৃতীয় বর্ষে পড়েও অনেক শিক্ষার্থী হলে সিট পাচ্ছেন না। বর্তমানে ১৭টি আবাসিক হল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে:

  • ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হল নির্মাণ প্রায় শেষ, ডিসেম্বরের মধ্যেই চালু হবে, যাতে ১১শ+ শিক্ষার্থী থাকতে পারবে;
  • আরও ৫টি হল নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে;
  • মেয়েদের একটি নতুন হলের কাজও শেষের পথে। 

শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসন
২০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ চলছে, উদ্বোধনের পর শ্রেণীকক্ষ সংকট দূর হবে।

ru-bd
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল সেবা চালু রয়েছে রাবিতে।

প্রশাসনের মতামত

ভিসি ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘গবেষণা, র‍্যাংকিং ও উচ্চশিক্ষায় রাবি ভালো করছে। শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে টিচার ইভালুয়েশন চালু হচ্ছে। পরীক্ষা মূল্যায়নে নাম ও রোলবিহীন কোডিং-ডিকোডিং পদ্ধতি চালু হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে কারিকুলাম আধুনিকায়নের কাজ চলছে।’

ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, প্রো-ভিসি (শিক্ষা)। তিনি বলেন, ‘সেশনজট নিরসনে প্রতিটি বিভাগের সেমিস্টার ও পরীক্ষা যেন নির্ধারিত সময়ে হয়, তা মনিটরিং করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই এ সমস্যা কেটে যাবে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর