শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

শিশু রাফা কখনও বাবা বলে ডাকতে পারবে না

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

শিশু রাফা কখনও বাবা বলে ডাকতে পারবে না

সোহাইবা আক্তার রাফার বয়স এখন ৮ মাস। মাতৃস্নেহে মুখে কেবল কথা ফুটতে শুরু করেছে। কিন্তু অবুঝ এই শিশু জানে না বাবাকে সে হারিয়েছে। ফুটফুটে এই শিশু যখন মায়ের গর্ভে ৮ মাস তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে তার বাবা সোহেল রানা (২৭) শহীদ হয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজিমেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের বড় গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মায়ের কোলে ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়ে দেখছে এই শিশুটি। চারদিকে তাকিয়ে যেন বাবাকে  খোঁজার ইঙ্গিত। এ সময় শিশুর মা রোকেয়া আক্তার সাম্মী (২২) তার স্বামী হারানো শোক আর কোলের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন।  


বিজ্ঞাপন


Graffiti-2503060906

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাদুল্লাপুরের বড় গোপালপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার সরকারের মেয়ে রোকেয়া আক্তার সাম্মীর বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভুসকুর মাদরাসাপাড়ার ফেরদৌস রহমানের ছেলে সোহেল রানার সঙ্গে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনের কিছুদিন পর সাম্মী আক্তার যখন অন্তঃসত্ত্বা তখন ঢাকার একটি সিকিউরিটি সার্ভিস আমদানি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয় স্বামী সোহেল রানা। সেই সময়ে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে আপন খেয়ালে চাকরি করছিলেন তিনি।

এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, তখন সোহেল রানাও ঝাঁপিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা পতনের একদফা আন্দোলনে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সোহেল রানা। এরপর ৬ আগস্ট ভুসকুর মাদরাসাপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তখন থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির অবহেলার শিকার হয় সাম্মী আক্তার। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি সাদুল্লাপুরের বড় গোপালপুরে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় গত ৮ মাস আগে ফুটফুটে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেয় সাম্মী আক্তার। স্বামী সোহেল রানা শহিদ হওয়ার পর থেকে তার বাড়িতে ঠাঁই না হওয়ায় বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন সাম্মী আক্তার। বর্তমানে স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক। মেয়ে শিশুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।  এই সন্তান নিয়ে কীভাবে চলবেন সেই প্রশ্ন তার চোখে-মুখে।  

আরও পড়ুন

ভুলে অ্যাকাউন্টে চলে আসা ৪ লাখ টাকা প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিলেন ইমরান

এ বিষয়ে রোকেয়া আক্তার সাম্মী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনে একদফা আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বামী সোহেল রানা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার দুই মাস পর আমার কোলজুড়ে জন্ম নেয় কন্যা সোহাইবা আক্তার রাফা। সে এখনও বোঝে না জন্মের আগেই তার বাবাকে হারিয়েছে। যেন বাবাকে এক নজর দেখার জন্য অবাক দৃষ্টিতে ইশারা করছে এ শিশুটি।

এ ব্যাপারে রোকেয়া আক্তার সাম্মীর বাবা আব্দুস সাত্তার সরকার বলেন, গেল বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমার মেয়েজামাই সোহেল রানা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এরপর পর থেকে স্বামীর স্বজনদের অবহেলায় আমার বাড়িতে শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করছে সাম্মী।

img_237495_

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্নভাবে বগুড়া জেলা থেকে সাম্মী আক্তার আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু গাইবান্ধা জেলা থেকে প্রশাসন কিংবা কোনো রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি আমার মেয়ে ও ছোট নাতনির খোঁজ রাখেনি।  

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জুলাই যোদ্ধা-২৪ সংগঠনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, বড় গোপালপুর গ্রামের রোকেয়া আক্তার সাম্মীর ব্যাপারটি কোনোভাবেই জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর