নড়াইলের কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি, হেনস্তা এবং ডিলারশিপ বাতিলের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক ও জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় বরাবর অভিযোগ পত্র দিয়েছেন সার ও বীজ ডিলার জামিল আহমেদ। এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দল কালিয়ায় যান।
বিজ্ঞাপন
খুলনার তদন্ত দল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার মহাজন বাজার এলাকায় অভিযোগকারী বিএডিসি অনুমোদিত সার ও বীজ ডিলার শেখ জামিল আহম্মেদের দোকান পরিদর্শন করেন এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম। সহযোগী হিসেবে ছিলেন একই কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. আব্দুস সামাদ এবং অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মো. তৌহিদীন ভূইয়া।
খুলনা থেকে কালিয়ায় হঠাৎ পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো তদন্ত টিম গঠন করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি এসেছিলেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আরও দুইজন কর্মকর্তা ছিলেন। অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।
তবে কত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন এবং ঊধ্বর্তন কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি তদন্তে এসেছেন সে-সব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ জুন নড়াইলের কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলার মহাজন বাজারের বিএডিসি অনুমোদিত সার বীজ ডিলার শেখ জামিল আহম্মেদ। তাতে জামিল দাবি করেন, প্রতিমাসে সার গুদামজাত করার পর মাল প্রাপ্তির চালানে কৃষি কর্মকর্তার স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে গেলে কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক তালবাহানা করে এবং মোটা অঙ্কে ঘুষ দাবি করেন। তার চাহিদা মাফিক ঘুষ না দেওয়ায় ডিলার জামিলকে হেনস্তা এবং ডিলারশিপ বাতিলের হুমকি দেন। এছাড়া জামিলের ডিলারশিপ বাতিল করে মহাজন বাজারের সামিউল নামে আরেক ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে ডিলারশিপ দেওয়ার প্রস্তাব দেন ইভা মল্লিক। পরে সামিউল ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে ইভা মল্লিক বলেন, ১ লাখ টাকা ছাড়া ডিলারশিপ দেওয়া হবে না।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগে আরও বলা হয়, কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। জামিল আহম্মেদ বিএনপিপন্থি হওয়ায় তার ডিলারশিপ বাতিল করে আওয়ামীপন্থীদের ডিলারশিপ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। তাছাড়াও ওই কর্মকর্তা গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে তার পছন্দের লোকজনের কাছে গোপনে সার বিক্রি করতে নির্দেশ দেন। তার এসব অনিয়ম মেনে না নেওয়ায় জামিল আহম্মেদের অ্যারাইভাল ও রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর দিতে অনীহা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা। তাছাড়া ইভা মল্লিকের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় প্রায়শই ডিলারদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। এই কর্মকর্তার কাছে কালিয়া উপজেলার ডিলার ও কৃষকরা অসহায়।
জামিল আহম্মেদের অভিযোগে উল্লেখ করা সামিউল ইসলামও গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে, কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক ডিলারশিপ দেওয়ার কথা বলে তার কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেদিন কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক বলেন, জামিল বিএডিসির ডিলার হলেও মৌসুমি ব্যবসায়ী। মৌসুমে মাল তুলে স্বাক্ষর করাতে আসেন। ফেব্রুয়ারিতে চালানে স্বাক্ষর নিয়েছেন, মার্চে মাল তোলেননি। এপ্রিল-মে মাসে মাল তুলে নড়াইলে বিক্রি করেছেন। আমি তাকে নিয়ম মেনে নিজের ঘরে মাল তুলে কৃষকদের সার দিতে বলেছিলাম। এজন্যই তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
প্রতিনিধি/টিবি

