বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কুখ্যাত ক্যাডার শামশুদ্দোহা সিকদার আরজুকে আটক করে পুলিশে দিল জনতা! শামসুদ্দোহা সিকদার আরজু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর সরাইপাড়া ইবতেদায়ী মাদরাসার সামনে থেকে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পাহাড়তলী থানায় দিয়ে যায়। নগরীর কোতোয়ালি থানা ও রাঙ্গুনিয়া থানায় তার নামে মামলা একাধিক রয়েছে। ফলে শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান পাহাড়তলী থানার ওসি মো. বাবুল আজাদ।
বিজ্ঞাপন
![]()
তিনি বলেন, স্থানীয় জনতা আরজু সিকদারকে গভীর রাতে আটক করে আমাদের কাছে দিয়ে গেছে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা থাকায় তাকে সেখানে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে আরজু সিকদারের নামে কয়টি মামলা ও কী অভিযোগে মামলা রয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি ওসি আবদুল করিম। তিনি বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে থাকা মামলা খতিয়ে দেখছি।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার। তিনি বলেন, রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় আরজু সিকদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা তদন্তে রয়েছে। তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
পুলিশের তথ্যমতে, আরজু সিকদার দুই মেয়াদে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ উত্তর জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন। এ সময়ে তার নানারকম রাজনৈতিক বক্তব্য ব্যাপক সমালোচিত হয়।
![]()
এরমধ্যে পারুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে ‘পুলিশ সেজে ঘরে ঘরে অভিযান চালানো’র একটি বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার রাজনীতিও রাউজান স্টাইলে চালানোর হুমকির বক্তব্য ভাইরাল হয়। এই বক্তব্যে রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
শনিবার সকালে তাকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামজুড়ে বিএনপি নেতারা বক্তব্যগুলো ফেসবুকে শেয়ার করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আনছুর উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর সৈয়দবাড়ি পৌর এলাকার কুখ্যাত সিকদার বাড়ির মৃত শামসুল হুদা সিকদারের ছেলে শামসুদ্দোহা সিকদার আরজু। ছাত্রজীবনের শুরু থেকে সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।
![]()
১৯৯০ সালের দিকে রাঙ্গুনিয়া কলেজে একের পর এক ফিল্মি কায়দায় বোমাবাজি করত সে। তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমে রাঙ্গুনিয়া কলেজে লেখাপড়ার সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রী হাসিনাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও পরে বিয়ে করেন। ক্রমান্বয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, থানা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে নেয় সে।
এরমধ্যে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গাড়ির ভেতরে ইট দিয়ে মেরে প্রাণে হত্যার চেষ্টা চালায়। ওয়ান ইলেভেনে ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিশ্বস্ত ক্যাডার হয়ে উঠে আরজু সিকদার। এরপর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাসেল রাসু, বি কে লিটন চৌধুরী, নাসির উদ্দিনের মতো একাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে সে। যাদের দিয়ে রাঙ্গুনিয়াসহ পুরো চট্টগ্রামে আধিপত্য বিস্তার করে আরজু সিকদার।

তার ক্যাডার বাহিনী হাছান মাহমুদের নির্দেশে ২০১৭ সালের ২১ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে দুর্গতদের দেখতে ও ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার পথে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালী এলাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন গাড়িবহরে লাঠি-রড-হকিস্টিক-পাথর নিয়ে হামলা করে। হামলায় রক্তাক্ত হন মহাসচিব মির্জা ফখরুল। আহত হন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ পাঁচ বিএনপি নেতা।
এ ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার আওয়াজ উঠে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ হামলাকে খুবই দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন। প্রশাসনকে তদন্ত করে দোষীদের ধরার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ ছিল আইওয়াশ। এ ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানার তৎকালীন ওসি একটি জিডি পর্যন্ত নেননি।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর হাছান মাহমুদ ও আরজু সিকদারসহ তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা ও আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়। যেগুলোকে মিথ্যা মামলা বলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। আর এসব মামলা দায়েরের পর আরজু সিকদার আত্মগোপন চলে যায়। হাছান মাহমুদ পালিয়ে যায় বিদেশে। বর্তমানে তিনি বেলজিয়ামে রয়েছেন। পাচার করা টাকায় ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে দিব্যি আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রতিনিধি/এসএস

