সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, সব সেবা বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, সব সেবা বন্ধ

শুধু হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েই কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎলাইন বিচ্ছিন্নের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালের বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।


বিজ্ঞাপন


শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার জানান, হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য উনি (পিডিবি কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুর রউফ) নিজে আসছে ও চিঠিও দিয়েছে। এ বিষয় আমরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি এতো টাকা বকেয়া রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দটা আমরা পায়নি। জুন মাস তো প্রায় শেষ ৬/৭ দিনের ব্যাপার নতুন অর্থ বছরে বরাদ্দ আসলে দিতে পারব, কিন্তু এইটুকু ধৈর্য ধারণ তিনি করেননি। তিনি গতকালকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছেন। আমার ২৪ বছরের কর্মজীবনে এই প্রথম পাইলাম হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা ঘটেছে।

electricity

এ সময় তিনি জানান, এই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে ডায়াগনস্টিক বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগসহ সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের।

এ বিষয়ে পিডিবি কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে পিডিবির আট মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যার টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। পরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের লিখিত আশ্বাসে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সংযোগ দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


তবে বিষয়টি নিয়ে রোগী ও স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

Cover_electricite

হোসেনপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন শাহ অনিক বলেন, হাসপাতালের মতো এত সেনসেটিভ একটি প্রতিষ্ঠানের হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কীভাবে করতে পারে?  তখন যদি ওটি জরুরি কোনো রোগী থাকত তার প্রাণও তো যেতে পারত?  তবে এত টাকা কীভাবে বকেয়া থাকে এর দায়ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিতে হবে।

হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের কৃষক বাদল মিয়া এসেছেন তার ছোটভাইকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে। তিনি বলেন, ফজরের সময় রওনা দিয়েছিলাম, ১২টা বাজছে হাসপাতালে কারেন্ট নাই, চিকিৎসাও বন্ধ। হাসপাতালের লাইন কাইট্টে দেয়, হেইডাতো বাপের জন্মেও শুনি নাই।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হল দেখার আহ্বান

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাছে লাখ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে কোনো অ্যাকশন নেয় না। আর আমাদের এখান থেকে বলা হয়েছে দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু শুনে নাই। আমরা তো মন্ত্রণালয় জানিয়েছি, সেখান থেকে টাকা পেলেই তো দিয়ে দেব। কিন্তু এত এত ভোগান্তি যে হলো। বিনা নোটিশে লাইন কেটে দিল, এর দায়ভার কি পিডিবি নিবে?

একদিকে আট মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, অন্যদিকে প্রাণ বাঁচানোর শেষ আশ্রয় একটি হাসপাতাল—এই দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত জিতলো ‘বকেয়ার কাগজ’, হারলো রোগীর জনসেবা। প্রশ্ন উঠেছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের—এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল? আর এমন ভয়াবহ পরিণতির দায় কি শুধু হাসপাতালের, নাকি সমানভাবে পিডিবিরও?

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর