সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাজশাহীতে কোরবানির পশু বিক্রি চাঙ্গা, ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হাসিল নিয়ে

আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৫, ০৮:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

রাজশাহীতে কোরবানির পশু বিক্রি চাঙ্গা, ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হাসিল নিয়ে

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজশাহীর পশুহাটগুলো শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে। বিভাগের ছোট-বড় সব হাটেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পশুর চাহিদাও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। হাটে হাটে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আমেজ। তবে এ আমেজের মধ্যেও ক্রেতাদের কাছ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেশি হাসিল (খাজনা) আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বুধবার (৪ জুন) জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ি পশুহাটে নির্ধারিত হারের চেয়ে তিনগুণ পর্যন্ত বেশি হাসিল আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পশুহাটের সংখ্যা ৩০২টি, যার মধ্যে ১৬১টি স্থায়ী ও ১৪১টি অস্থায়ী। ঈদ উপলক্ষে দেশে মোট ১ কোটি ২৬ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশই রাজশাহী বিভাগে—প্রায় ৪৩ লাখ। রাজশাহী জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার, অথচ প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার পশু। ফলে প্রায় ৯১ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহীর সিটি হাট, পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট, মোহনপুরের কেশরহাট এবং গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ি হাটে সবচেয়ে বেশি পশু কেনাবেচা হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কালো রঙের ছাগল ও মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অনেক ক্রেতাই গোশতের কেজি অনুযায়ী পশুর দাম হিসাব করছেন। দালালদের মাধ্যমে পশু বিক্রিও ছিল দৃশ্যমান।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পশুর দাম বেশি। তবে বিক্রেতা ও খামারিদের দাবি, পশুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়েছে, সে তুলনায় দাম বেশি নয়।

জেলার বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের খামারি হৃদয় আহমেদ মফিদুল চারটি গরু ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সর্বোচ্চ একটি গরুর দাম পেয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, বাকি দুটি ১ লাখ করে ও একটি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ২ হাজার টাকার খাবার দিতাম গরুগুলোকে, মাসে শুধু খাবারেই ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবু প্রত্যাশিত লাভ পাইনি।’


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জানান, ‘আমি গ্রাম থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করি। এবার ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় কেনা গরু ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। পরিবহন ও সময়ের খরচ ধরলে লোকসান হয়েছে।’

সেকেন্দার আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘গত বছর ৩৫ কেজি ওজনের একটি খাসি ২৮ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। এবার সেই একই ওজনের খাসির দাম চাচ্ছে ৩২ হাজার টাকা।’

আরও পড়ুন—

rajshai

ক্রেতারা অভিযোগ করেন, ছাড়ের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ি হাটে নির্ধারিত হাসিল ১৬০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকায় কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মামুনুর রশিদ ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে পশু কিনতে গিয়েছিলেন মহিশালবাড়ি হাটে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের নির্ধারিত হারে ১৬০ টাকা থাকার কথা, কিন্তু হাটে গিয়ে দেখি ৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছিলাম, কিন্তু হাটের লোকজন কোনো কথা শোনেনি। আমাদের জিম্মি করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটা আইনবহির্ভূত।’

ওমর আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি একটি খাসি কিনেছি। ছাড় বাবদ আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছে। আগে এত টাকা লাগত না। এবার জোর করেই আদায় করা হয়েছে।’

সাবেক ছাত্রনেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে হাটে জমজমাট বেচাকেনা চলছে। কিন্তু ক্রেতাদের কাছ থেকে জিম্মি করে এভাবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া অন্যায়। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

মহিশালবাড়ি হাটের ইজারাদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বর্তমানে সিটি হাটে আছি, মহিশালবাড়িতে না। তাই কিছু বলতে পারছি না।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মদদে এই অতিরিক্ত আদায় চলছে। এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের গোদাগাড়ী পৌরসভার যুগ্ম আহ্বায়ক ইবরাহিম খলিলুল্লাহ, মুনতাসির, বিএনপি নেতা হাসিবুর রহমান, কানন ও শরিফসহ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইবরাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘হাটের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিলাম, কিছু জানি না। বেশি টাকা আদায় হচ্ছে বলে আমিও শুনেছি।’

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘ইজারার মালিক আমরা না। ইউএনও সাহেবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরাও গিয়েছিলাম, কিন্তু সেভাবে কিছু পাইনি।’

বাড়তি টাকা আদায়ের রশিদ রয়েছে—এ বিষয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘এসিল্যান্ড-ইউএনও আছেন, তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাবেন। আমাদের সাহায্য লাগলে সহযোগিতা করব।’

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি, খোঁজ নেওয়া হবে।’

rajs

তবে স্থানীয়রা বলছেন, বারবার জানানো হলেও প্রশাসন কেবল “দেখছি-দেখব” বলেই বসে আছে। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর