সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফেনীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট, দেশি গরুর আধিক্য, দাম চড়া 

নুর উল্লাহ কায়সার, ফেনী
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

Qurbani

সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। অন্যান্য বছর ফেনীর পশুর হাটগুলোতে সাদা গরুর আধিক্য দেখা গেলেও এবার দেশি গরুর আধিক্য দেখা যাচ্ছে। তবে পশুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ক্রেতারা। তাই কোরবানির পশুর হাট জমে উঠলেও ক্রয়-বিক্রয় সেইভাবে এখনও জমে ওঠেনি। গত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণেও ক্রেতা বিক্রেতা পর্যায়ে নানা ভোগান্তি রয়েছে। 

জেলা প্রশাসন জানায়, ফেনী জেলায় এবার ১১২টি অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৬ উপজেলায় স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে আরও ১৫টি। অস্থায়ী হাটের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৪০টি, ছাগলনাইয়ায় ১৫টি, ফুলগাজীতে ৭টি, পরশুরামে ৮টি, সোনাগাজীতে ২১টি ও দাগনভূঞায় ২১টি। ফেনীতে উল্লেখযোগ্য গরুর হাটের মাঝে ফুলগাজী সদর ও মুন্সির হাট, ফেনী শহরের সিও অফিস পশুর হাট, পাঁচগাছিয়া বাজার পশুর হাট, লস্কর হাট, মোহাম্মদ আলী বাজার, দাগনভূঞা সদর ও কোরাইশমুন্সি, সোনাগাজী বাজার ও বক্তারমুন্সি বাজার, পরশুরাম সদর ও বক্সমাহমুদ, সুয়ার বাজার, ছাগলনাইয়ার জমদ্দার বাজার, চাঁদগাজী বাজার, শুভপুর বাজার।  ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া হাট ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে সহস্রাধিক গরু ও ছাগল বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। এসব পশুর মাঝে বেশিরভাগই দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা। তবে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার বাজারে সাদা গরুর আধিক্য কম দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_503796168_1776369036594277_5862497690514273387_n

আসিম মাহমুদ নামের এক ক্রেতা জানান, হাটে সব জাত ও সব প্রকারের গরু রয়েছে। আমরা প্রতি বছর দেশি গরু দিয়ে কোরবানি দিয়ে থাকি। এবার দেশি গরুর দাম বেশি। বাজেটের সাথে সমন্বয় করতে পারছি না। ৩টি হাট ঘুরেও বাজেটের মধ্যে গরু মেলাতে পারিনি।

বিক্রেতারা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দেশি গরুর দাম একটু বেশি; এটা মানতেই হবে। কারণ গরুর খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে; তার প্রভাব পড়েছে উৎপাদন খরচের ওপর। দামের সাথে সেটিতো মানতেই হবে। কোনো বিক্রেতা ও খামারি লস করে তো পশু বিক্রি করবেন না।

হাসান মাহমুদ সবুজ নামের এক বিক্রেতা জানান, সোহান অ্যাগ্রো ফার্মে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে পালিত ২০টি গরু বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে এসেছেন। বাজারে প্রচুর ক্রেতা রয়েছে, তবে আশানুরূপ বিক্রি নেই বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, তার খামারে ফিজিয়ান জাতের লালিত ৮০০ কেজি ওজনে সোহান-১ নামের গরুর দাম ৫ লাখ টাকা চাচ্ছি। রসিক কোরবানি দাতাদের কাছে এ গরুর চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে বাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি হাটে বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্থান, মোবাইল ক্লিনিং টিম এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় বর্জ্য অপসারণে বিশেষ টিম কাজ করবে। হাট শেষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা পরিষ্কার করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও এবার জেলায় অনুমোদন ছাড়া বাজার বসলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

হরিয়ানা থেকে গবেষণার জন্য এলো ৯৫টি মহিষ

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকটের শঙ্কা নেই। জেলায় অন্তত ৫ হাজার তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানির পশু লালন-পালন করছেন। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ কার্যক্রম করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে ফেনীতে। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে ৮৭ হাজার ২২৭টি গবাদি পশু। এরমধ্যে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ এবং ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল ও ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২০০টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হয় ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।

thumbnail_503832546_1776369133260934_9158915916661253658_n

পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে সব রকমের চাঁদাবাজি ও মারামারি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জেলা পুলিশের পক্ষ-থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো গুজব বা অন্য কোনোভাবে যেন কোরবানির পশুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করা হয়; সে ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পশু বহনকারী গাড়িতে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, পশুর হাটে পকেটমার, মলম পার্টিসহ ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ গ্রহণ করেছে।

ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো গরু না আসে সেজন্য সীমান্তে বিজিবি সচেষ্ট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর