খাল-বিল-নদী, ধান, সুপারি, নারকেল এই মিলে বরিশাল। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চর সাইদখালী গ্রামে সন্ধ্যা নদীর ওপরে খেয়া বেয়ে সংসার চালান ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রহিম হাওলাদার।
রোদ-বৃষ্টি, ঝড় সব কিছু মধ্যে চলে তার খেয়া। কারণ খেয়া থেমে গেলে তার চুলায় জ্বলবে না আগুন, না খেয়ে থাকতে হবে পরিবারের।
বিজ্ঞাপন
চর সাইদখালী গ্রামের একটি অংশ দ্বীপের মতো যেটার নাম সাইদির চর। সেখানে ৪০০ শত পরিবারের বসবাস। বিচ্ছিন্ন এই সাইদির চরের সঙ্গে যোগাযোগ একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। এখানে নৌকা দিয়ে খেয়া বেয়ে মানুষ পারাপর হয়। ৪০০ মানুষের জন্য পারাপারের জন্য দুই ঘাটে দু’টি খেয়া। তার একটি খেয়া বেয়ে সংসার চালান ৭ সন্তানের জনক বৃদ্ধ আব্দুর রহিম হাওলাদার (৭০)।
![]()
চর সাইদ খালী নদীর পার হয়ে ওপরে যাওয়ার সময় কথা হয় আব্দুর রহিম হাওলাদার (৭০) এর সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ৭ বছর ধরে খেয়া চালান এখানে। অতীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় কারও ট্রলারে নিতে চায় না। তাই এই খেয়া চালিয়ে সংসারের অন্ন যোগান।
তিনি আরও বলেন, ১০ হাজার টাকা ইজারা নেওয়া এই ঘাট থেকে সারাদিন খেয়া চালিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় করেন। তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে। পারাপারে স্থানীয়রা ৫ টাকা দিলেও অপেক্ষায় থাকেন পর্যটকদের বা বাইরের মানুষের জন্য। অনেক ভালোবেসে উপহার দিয়ে যান বেশি টাকা। আবার কারও কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা নেন তিনি।
আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, স্ত্রী আর মেয়েসহ নাতি নিয়ে থাকেন তিনি। তিন ছেলে জেলে সাগরে মাছ ধরতে যায় তা দিয়ে যা আয় হয় তাতে তাদের সংসার চলে না। আমাকে দেখবে কি দিয়ে।
![]()
তিনি জানান, বয়স হইছে ৭০। কিন্তু ভোটার আইডি কার্ডে কম, তাই পাই না কোনো সরকারি সহযোগিতা। এই বয়সে আর চলে না খেয়া। ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা হলে কষ্ট লাগব হতো। খেয়া ঘাটের এপার-ওপার কোনো পারে নেই যাত্রী ছাউনি। আশপাশে নেই বাড়িঘর। এখানে একটু যাত্রী ছাউনি দরকার। অনেক সরকারি লোক আসে, মেম্বর, চেয়ারম্যান আসে কারও কাছ থেকে এ ব্যাপারে সাহায্য পাই না।
এই বয়সে এসে একটু সুখ খুঁজে ফেরেন বৃদ্ধ আব্দুর রহিম, সুখ যে সবার কপালে ধরা দেয় না তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ তিনি।
প্রতিনিধি/এসএস

