বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এর ফলে নদীর মাঝামাঝি ও আশপাশের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। পানির প্রবল ঢেউ ও স্রোতে ভেসে গেছে বহু গরু ও মহিষ।
শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় অন্তত আটটি গরু ও মহিষের মৃতদেহ নদীতে ভেসে থাকতে দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
তাদের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ জোয়ারের তোড়ে চরাঞ্চলে থাকা গবাদিপশু হারিয়ে যায়। কিছু মহিষ পানির স্রোতে ভেসে তীরে চলে এলে স্থানীয়রা সেগুলো উদ্ধার করেন।
তবে ঠিক কত সংখ্যক গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে— সে বিষয়ে এখনো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি।
নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া জোয়ারে আমি অন্তত ২৬টি গরু ও মহিষের মৃতদেহ নদীতে ভাসতে দেখি।’
চরলরেঞ্চ এলাকার জেলে আবদুল কাদের জানান, ‘শুক্রবার সকালে কমলনগরের নাছিরগঞ্জের বাত্তির খাল মাছঘাট থেকে নবীগঞ্জ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীতে বেশ কয়েকটি গবাদিপশুর মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে দুটি ছিল ছাগল।’
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে নবীগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রায় ৩০টি গরু ভেসে যায়। এর মধ্যে একটি আমার নিজের ছিল। বাকিগুলো তাদের মালিকরা শনাক্ত করে নিয়ে যান। উদ্ধার করা গরুগুলোর অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, যাদের চিকিৎসা দিতে হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘গরুগুলো চর কাঁকড়া থেকে সাঁতরে তীরে আসে। যেগুলো জোয়ার ও ঢেউয়ের তোড়ে টিকে থাকতে পারেনি, সেগুলো পানিতে ডুবে মারা গেছে।’
স্থানীয়দের মতে, চর কাঁকড়ায় থাকা অন্তত দুই শতাধিক গরু-মহিষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
নবীগঞ্জের কটরিলা খালে শুক্রবার সকালে নয়টি গরুর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানান আরেক বাসিন্দা মো. মোরশেদ।
রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর ‘চর আবদুল্লাহ’ লক্ষ্মীপুর জেলার সবচেয়ে বড় গরু-মহিষের বিচরণস্থল। এখানে শত শত গবাদিপশু বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। দুর্যোগের সময় এসব চরের পশুগুলো চরম ঝুঁকিতে পড়ে।
চর আবদুল্লাহর বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের সময় শত শত গরু-মহিষ নিখোঁজ হয়েছে।’
আরেক বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন জানান, ‘আমার পাশের বাড়ির একজনের তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল এবং আরেকজনের দুটি মহিষ জোয়ারে ভেসে গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কুমুদ রঞ্জন মিত্রকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। গবাদিপশুর ক্ষতির বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’
প্রতিনিধি/একেবি

