সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বন্য হাতির আক্রমণে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দিশেহারা পরিবার

জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বন্য হাতির আক্রমণে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দিশেহারা পরিবার

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে দু’জন মারা গেছেন। ঘটনাটি সোমবার (২০ মে) রাত ৯টার দিকে। মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলা ও বাঁকাকুড়া এলাকায় মর্মান্তিক এ দু’টি ঘটনা ঘটে।

নিহত এপিলিস (৫০) ও আজিজুর রহমান (৪২) দু’জনই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের মৃত্যুতে দুই পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার।


বিজ্ঞাপন


উপজেলার গান্ধিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান পেশায় ছিলেন ভ্যানচালক। তার উপার্জনের টাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসার চলত। একই অবস্থা বড় গজনি অবকাশ কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা মিস্টার এফিলিসেরও। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। তার উপার্জনেই চলত স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার। বড় মেয়েটা এবার ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে।

নিহতদের স্বজনরা জানায়, ঘটনার রাতে আজিজুর রহমান গজনি দরবেশতলা ঝুরা এলাকা থেকে বালু আনতে গিয়েছিলেন। এ সময় একদল বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হন তিনি। স্থানীয় লোকজন মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়িয়ে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে সাড়ে ১০টার দিকে বাঁকাকুড়ার কাঁচা রাস্তা দিয়ে তিনজনকে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন এফিলিস মারাক। পথে হাতির দল তাদের ওপর আক্রমণ করে। অন্য তিনজন পালিয়ে গেলেও এফিলিসকে হাতির একটি দল ধরে ফেলে। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়।

আজিজুরের পরিবার জানায়, তিনি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতেন। বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলেও ছোট তিন ছেলে এখনও স্কুলে পড়ে। এফিলিসের ছেলে-মেয়েও ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। দুই পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল।

আরও পড়ুন

গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে দুই জনের মৃত্যু

আজিজুরের স্ত্রী শিউলী আক্তার বলেন, খুব কষ্টে তাদের সংসার চলত। হাতির আক্রমণে তার স্বামী মারা যাওয়ায় পরিবারে আয় করার মতো আর কেউ নেই। বাড়িভিটা ছাড়া তাদের আর কোনো জমিজমাও নেই। ভবিষ্যতে সন্তানদের নিয়ে তিনি কীভাবে চলবেন, তা তার জানা নেই।

এফিলিসের স্ত্রী প্রীতিনাস হাদিমা বলেন, দিনমজুরি কাম কইরা যে টাকাপয়সা পাইত, তা দিয়ে কোনোরহম সংসার চলত। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর অহন ছেলেমেয়েরে লইয়া কেমনে চলমু। আমার চোখে-মুখে অন্ধকার।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহিদুল হক মনির বলেন, পরিবার দু’টি দরিদ্র। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা প্রাথমিকভাবে সহযোগিতা করেছে। তবে পরিবার দু’টির জন্য স্থায়ী কিছু একটা ব্যবস্থা করা দরকার।

কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, উপার্জনক্ষম দুই ব্যক্তির মৃত্যুতে পরিবার দু’টি অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।

বন বিভাগের গজনি বিট কর্মকর্তা মো. সালেহিন নেওয়াজ জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির বলেন, হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব এড়াতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে বনবিভাগ। তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুটি ঘটনা ঘটে গেল। এতে আমরাও শোকাহত। আর দ্রুতই প্রতিটি পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর