সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রংপুরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল

জেলা প্রতিনিধি, রংপুর
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫, ০১:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

রংপুরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল

রংপুরে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি অফিসের দাবি, পানি দ্রুত নেমে গেলে আক্রান্ত জমির ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই।

বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টা পর্যন্ত রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে যে জেলায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে দু’দিনে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: রাজারহাটে ১৬ ইঞ্চি কলাগাছে সাত মোচা

টানা বৃষ্টির কারণে রংপুর নগরীর নিম্নাঞ্চল, অলি-গলি ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে পানিতে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০-২৫ টি গ্রাম এখন হাঁটু পানির নিচে। শুধু শহর কিংবা বন্দর নয়, গ্রামের ফসলের মাঠ, মাছের পুকুর, সবজি ক্ষেত সবই পানির নিচে।

রংপুরের অনেক স্থানে এখনও পুরোপুরি ধান মাড়াই শেষ হয়নি। কেউ ধান কাটলেও ধান মাড়াই করতে পারেননি বৃষ্টির কারণে। ফলে ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারো কারো ধান পানির নিচে রয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে পানি না নেমে গেলে সেসব ধান আর কাটা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা।

সবজির শহর খ্যাত উপজেলা রংপুরের মিঠাপুকুরের রানীপুকুরে এখন শুধু পানি আর দীর্ঘশ্বাস। রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া, তাজনগর, আফজালপুর, ভক্তিপুর আর বলদীপুকুর গ্রামের মাঠগুলো এখন যেন একেকটা ছোট ছোট নদী। মাঠে গিয়ে ফসলের কোনো চিহ্নই দেখা যাচ্ছে না, শুধু থৈ থৈ পানি।


বিজ্ঞাপন


কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি জমে পুরো ফসলের মাঠই ডুবে গেছে। ধান, আদা, শাক-সবজি সবই এখন পানির নিচে। এ কারণে কৃষকের চোখ- মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা দিয়েছে, কারণ ওই জমির ফসল ছিল তাদের একমাত্র ভরসা।

রানীপুকুরের পূর্বপাড়া এলাকার মোস্তফা মিয়া জানান, অনেক কষ্ট করে জমি বন্ধক নিয়ে এবং ঋণ করে আবাদ করেছি, কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে সব শেষ। এই মৌসুমের রুজি-রোজগারের সব আশা শেষ। এক একর জমির কাঁকরোল, এক একরের করলা, শসা সব পানির নিচে। আর দুই-এক দিন পানিতে থাকলে গাছ মারা যাওয়া শুরু করবে। এদিকে বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ৩৫ মণের 'ব্লাক ডায়মন্ড' ষাঁড়ের দাম ১২ লাখ

একই এলাকার আমিন আলী জানান, গত বছরের লাভের (সুদের) টাকা এখনও শোধ হয়নি। এবারেও লাভের (সুদের) ওপর টাকা নিয়ে আবাদ করেছি। এখনও আসল টাকা ওঠেনি। এখন আবার বৃষ্টির পানিতে জমির ফসল তলিয়ে গেল। এখন আর কান্না করা ছাড়া কিছু করার নেই। 

আমিন আলীর মতো শত শত কৃষক এখন অসহায়। যাদের চোখে ছিল নতুন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন, সেই চোখে এখন শুধু কান্না। এই বৃষ্টি থামবে কিনা, পানি নামবে কিনা - তা নিয়েই তাদের দিন কাটছে চরম শঙ্কার মধ্য দিয়ে।

মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন ঢাকা মেইলকে জানান, টানা বৃষ্টির কারণে কয়েক হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেলেও পানি নেমে যাওয়া শুরু করায় ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে প্রায় তিন হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে রয়েছে। আমরা কৃষকের পাশে আছি, তাদের সব ধরনের পরামর্শ প্রদান করছি।

এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে করে ধান, বাদাম, কাউন, শাকসবজি, মরিচ ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা এই অঞ্চলের কৃষকরা। বিশেষ করে বাদামের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

রমজান আলী নামে এক কৃষক জানান, এমনিতেই চরাঞ্চলে এক মৌসুমের আবাদ হয়। সেটাও এবার আর হলো না। বাদাম চাষ করেছিলাম তিন একর জমির মধ্যে। সব পানিতে ডুবে গেছে। এই পানি যে কবে কমবে। তবে পানি কমলেও তত দিনে বাদাম নষ্ট হয়ে যাবে। এবার চরম ক্ষতির মুখে পড়লাম।

অন্যদিকে শুধু ফসল নয়, টানা বৃষ্টিতে রংপুরের মাছচাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। অনেকের পুকুর ভরে গেছে, পাড় ভেঙে ভেসে যাচ্ছে চাষ করা মাছ। মৌসুমের শুরুতে এক রাতেই পানিতে ভেসে গেছে তাদের স্বপ্ন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে জানান, ফসল পানিতে নিমজ্জিত হওয়া মানে, নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়। যদি পানি এক সপ্তাহের মধ্যে সরে যায়, তাহলে জমির ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তাছাড়া জমির পানি যদি পরিষ্কার হয়, তাহলে তেমন চিন্তা নেই। তবে যদি পানি কাদা মিশ্রিত হয়, তাহলে ফসল দ্রুত সারিয়ে তুলতে পানি স্প্রে করে কাদা ধুয়ে ফেলতে হবে জমির। গত দু’দিনের তুলনায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। দুই-এক দিন বৃষ্টি না হলেই পানি নেমে যাবে। তবে একেবারে যে ফসলের ক্ষতি হয়নি, সেটা বলবো না। কোথাও কোথাও ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে আছে।

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর