সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রক্তঝরা ‘মুল্লুক চলো’ দিবস, জীবনমানে আজও যারা পিছিয়ে

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫, ০৮:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

Tea Labour

উন্নত জীবনযাপনের আশা নিয়ে জন্মমাটি ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে আসেন একদল মানুষ। কিন্তু মাঠে এসে তাদের সেই সোনালি স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। স্বপ্নভঙ্গের জ্বালা নিয়ে তারা ফিরতে চান নিজের দেশে। শতবর্ষ আগে চা শ্রমিকদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলনই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলন হিসেবে।

২০ মে, এ দিনটিকে চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পালন করেন চা শ্রমিক দিবস হিসেবে। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিনটি পালন করবেন চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000139195_20250501_205528548

বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে পায়ে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ গোর্খা বাহিনীর সৈনিকরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে চা শ্রমিকদের হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকেও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। চা শ্রমিক পায়নি ফিরে স্বভূমির অধিকার। এরপর থেকেই প্রতি বছর ২০ মে নিজেরাই  চা শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে আসছেন নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার চা শ্রমিকরা।

thumbnail_1000139192_20250501_205455798

জানা যায়, ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের একই ভূ-খণ্ডের জায়গা স্থানান্তর করা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ (গাছ নড়লে টাকা মিলবে) এমন প্রলোভনে শ্রমিকদের নিয়ে এলেও তাদের যে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে সেই ভুল বুঝতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে হিসেবহীন অনেক চা শ্রমিকের জীবন অকালে ঝড়েছে। এর মধ্যে অব্যাহত ব্রিটিশদের অত্যাচার তো ছিলই। নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চল’ (মাতৃভমিতে ফিরে যাবার) আন্দোলনের ডাক দেন।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000139191_20250501_205439733

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সূত্রমতে, বর্তমানে সারাদেশে ১৬৬ চা বাগানে চা জনগোষ্ঠী রয়েছেন ৫ লক্ষাধিক। এর মধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজারের ওপরে। চা শ্রমিকদের ৬৪ শতাংশই নারী। সিলেট বিভাগে ১৩৫ চা বাগান। শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে দেশের অর্ধেকেরও বেশি ৯২টি চা বাগান।

thumbnail_1000139196_20250501_205544927

চা শ্রমিকরা আক্ষেপ করে জানান, চা শিল্পের উন্নতি হলেও বদলাচ্ছে না চা শ্রমিকদের জীবন। সারাদিন কাজের পর একজন চা শ্রমিকের আয় হয় ১৭০ টাকা। তাদের নেই নিজস্ব জাতিগত পরিচয়। বাগানের ভেতর রাস্তার দু’পাশে ছনের চালা আর মাটি দিয়ে তৈরি ৮ হাত প্রস্থ ও ১২ হাত দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এক একটি ঘর তাদের পূর্ব পুরুষের ঠিকানা। একসঙ্গে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী নিয়ে তাদের জীবন চলে। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি তাদের ঘরের দৈর্ঘ্য।

আরও পড়ুন 

তলববারের দিন চা শ্রমিকদের সমস্ত ক্লান্তি উধাও হয়

thumbnail_1000139193_20250501_205638489

চা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করেন বিশ্বজিৎ নন্দী। তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছরই রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালনের আহ্বান জানালেও এ ব্যাপারে সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি আজও। চা জনগোষ্ঠীদের যুগ যুগ ধরে আশ্বাস দিয়ে এদেশে এনে স্বল্প মজুরির মাধ্যমে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কাজ করানো হচ্ছে।

চা জনগোষ্ঠীর সদস্য মিন্টু দেশোয়ারা বলেন, আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়ছি। আজ ১০০ বছর পরেও মনে হচ্ছে আমরা আগের চেয়ে আরও বঞ্চিত হচ্ছি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে।

thumbnail_1000139194_20250501_205509924

চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, চা বাগানের শ্রমিকদের ভাগ্যে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি মৌলিক অধিকারও ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর