সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মেলা নিয়ে জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে আহত ১১, দোকান ভাঙচুর-লুটপাট

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫, ০৭:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

BNP-Jammat Attack

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু-চম্পাবতী মেলা বসানো নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_6c92a225-ffac-48e4-96af-5f5a4b67bd0f

এ ছাড়াও সংঘষেংর সময় মেলায় আগত দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনায় জামায়াত এবং বিএনপি একে অপরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছে।

জামায়াতের আহতরা হলেন, জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, জামায়াতের কর্মী কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), শহিদুলের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, সুকচাদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলী। তারা কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_e8756eec-7553-46f4-95d9-92bb4aaed9e3_(1)

বিএনপির আহতরা হলেন, খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তারা বিএনপির কর্মী-সমর্থক। তারা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজীকালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয়রা। ১৭ মে মেলা থেকে শুরু হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি তোলেন জামায়াত ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। আর প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও বিএনপির কিছু সমর্থকরা মেলা বসানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল থেকে এলাকায় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ দফায় দফায় টহল দেন। তবুও এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

thumbnail_e8756eec-7553-46f4-95d9-92bb4aaed9e3

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের কয়েক নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র হাঁসুয়া, রাম দা, লাঠিসোটাঁ নিয়ে অন্তত ৩০টি দোকানে হামলা, ভাঙচুর লুটপাট চালিয়েছে।

এ দিকে সংঘর্ষের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা গেছে, কয়েক’শ জামায়াত নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। চলছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

07bd0db0-3d87-4bce-93df-ac21475fccca

আজ রাত সাড়ে ৭টার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভিড় করেছেন। আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের দেখতে ছুটে এসেছেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন।

এ সময় হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়ার আসর বসানো হয়। সেজন্য প্রশাসন অনুমতি দেননি। তবুও বিএনপি ও মেলা কমিটি মেলার আয়োজন করেছেন। আমরা মেলার বিষয় জানতে গেলে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছেন। আমিসহ আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। থানায় মামলা করা হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সমর্থক ও খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, জামায়াতের শত শত লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। বিচারের আশায় থানায় মামলা করব।

রাত ১০টার চাপাইগাছি বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নিরবতা। মেলার মাঠের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী ও বাজারের কলা ব্যবসায়ী মফি শেখের ছেলে নাদের শেখ (৬৫) বলেন, শ শ বছর ধরে মেলা হয়ে আসছে। আজ দেখলাম দুইপক্ষের দাবড়া দাবড়ি। জামায়াতের লোক বেশি ছিল। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।

499635548_3142007535972151_7038293769762425638_n

মেলায় হরেক মালের দোকান বসিয়েছেন পাবনার চাটমোহরের দিলবার হোসেনের ছেলে আরজ আলী। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আসরের পর থেকে জামায়াত শিবিরের লোকজন বার বার উঠে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার একটু আগে কয়েক শত টুপিপরা লোক রামদা, হাঁসুয়া, লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানে হামলা চালায়। ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। পরে এসে দেখি মালামাল কিছুই নেই প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন

‘বাবা-মাকে মারধর করে বসতঘরে আগুন, মাদকাসক্ত ছেলে গ্রেফতার’

জামায়াতের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন, ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা করেছেন। থানায় মামলা করা হবে।

শতবছর ধরে চলা আসা মেলায় এবার অনুমতি মেলেনি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, মেলা বসানো নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর